নড়াইলে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জীর ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী পালিত

0
264

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলে ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জীর ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়েছে। গতকাল নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর গ্রামে তাঁর মামা বাড়িতে শুভ্রা মুখার্জি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দিন ব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।শুভ্রা মুখার্জীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়ে কর্মসূচির শুরু করা হয়। এরপর গীতা পাঠ,নতুন বস্ত্র বিতরণ,নাম সংকীর্ত্তণ,স্মরণ সভা করা হয়। এ কর্মসূচিতে নড়াইল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার সহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।
স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহম্মদ হাবিবুর রহমান,তিনি স্মরণ সভার বক্তব্যে বলেন এলাকার মানুষের কাছে তিনি গীতা দেবী নামে পরিচিত হলেও বিশ্ববাসির কাছে তিনি শুভ্রা মুখার্জী নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন নিজের মেধা, মনন, দক্ষতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে গ্রামের সাধারণ মেয়ে থেকে হয়েছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর স্ত্রী। ভারতের ফার্ষ্ট লেডি। মধুর সময় এবং জীবন কেটেছে দুজনের। এখন দুজনই পরপারে। আমরা সকলেই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা তাঁরা দুজনই যেন সর্গবাসি লাভ করেন।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়,নড়াইল পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা,নড়াইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম, নড়াইলের সহকারী কমিশনার (কালেক্টরেট) আছিফ উদ্দিন,নড়াইলের সহকারী পুলিশ সুপার (প্রঃ) সোহানুর রহমান সোহাগ, নড়াইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শওকত কবির, তুলারামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.বুলবুল আহম্মেদ, রন্জন কুমার,সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, শুভ্রা মুখার্জী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ও আত্মীয়-স্বজন প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন শূভ্রা মুখার্জি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা কার্তিক ঘোষ।
শুভ্রা মুখার্জীর জীবনী থেকে জানা যায়,তিনি ১৯৪০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এবং
২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট ভারতের নয়াদিল্লির একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা গ্রামে বাবা
অমরেন্দ্র ঘোষ ও মা মীরা রানী ঘোষের সংসার আলোকিত করে জন্ম নিয়েছিলেন শুভ্রা। তার প্রথম দিকটা নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে (পিত্রালয়) কাটলেও পরবর্তীতে মামাবাড়ি তুলারামপুরে চলে যান।
মামাবাড়ি থেকে চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরে ১৯৫৫ সালের দিকে মায়ের সঙ্গে ভারতের কলকাতায় পাড়ি জমান।নয় ভাইবোনের মধ্যে শুভ্রা ছিলেন দ্বিতীয়। শুভ্রার অন্য ভাই-বোনেরা ভারতে চলে গেলেও নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে বসবাস করেন শুভ্রার ভাই কানাই লাল ঘোষ। এদিকে, শুভ্রার মামাতো ভাইয়েরা বসবাস করেন নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর গ্রামে। প্রণব মুখার্জির সাথে বিয়ের পর নড়াইলের মেয়ে ‘গীতা ঘোষ’ পরিচিতি পান ‘শুভ্রা মুখার্জি’ হিসেবে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী শুভ্রা পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক। তিনি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ছিলেন।লেখক হিসেবেও তাঁর নামডাক ছিল। তিনি ‘চোখের আলোয়’, ‘চেনা অচেনায় চীন’, (ইন্দিরা গান্ধী ইন মাই আই’স) প্রবন্ধ গ্রন্থসহ গল্প ও ফিচার লিখেছেন।
শুভ্রা মুখোপাধ্যায় ‘চোখের আলোয়’ গ্রন্থে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন, বয়স তখন ১৪, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বয়স ২২ বছর। সেই বয়সে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। শুভ্রা ও প্রণব মুখার্জির দুই ছেলে অভিজিৎ ও সুরজিৎ এবং মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নি। ভারতে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত তারা।
শুভ্রা মুখার্জীর মামাতো ভাই নড়াইলের তুলারামপুর গ্রামের কার্তিক ঘোষ দৈনিক নড়াইলকে জানান, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মামাশ্বশুরবাড়ি আমাদের তুলারামপুর গ্রামে। বিশেষ করে গীতা দিদির শৈশব কেটেছে আমাদের বাড়িতেই। দিদি তুলারামপুরে থেকে চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছেন দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। তারপর চলে যান ভারতে ১৯৯৫ সালে মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নিকে নিয়ে দিদি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তবে, সে সময় সাথে ছিলেন না আমাদের জামাইবাবু প্রণব মুখার্জি। পরে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ জামাইবাবুকে (প্রণব মুখার্জি) সঙ্গে করে নড়াইলের ভদ্রবিলার বাড়িতে আসেন গীতা দিদি। তুলারামপুর এলাকার ৯৬ বছরের বায়োবৃদ্ধা নারী কল্পনা বিশ্বাস বলেন, শুভ্রা আমাদের কাছে ‘গীতা’ নামে পরিচিত ছিল। নড়াইলের সেই ‘গীতা’ নামের মেয়েটিই ভারতবাসীর কাছে ‘শুভ্রা মুখার্জী’ নামে পরিচিত। ছোটবেলায় গীতা আমাদের পুকুরে গোসল করতো। সমবয়সীদের সাথে খেলায় মেতে উঠত। বাগানে আম কুড়াতো।গান গাইতে পারতো। ছোট বেলায় স্কুলসহ নানা অনুষ্ঠানে গান গেয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here