পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি:
কপোতাক্ষ নদের ভয়াবহ ভাঙ্গনে পাইকগাছার রাড়ুলীর মালো পাড়ার ঘরবাড়ী, গাছপালা, রাস্তা ও জমি নদগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কপোতাক্ষ নদের তীব্র স্রোতের তোড়ে ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পড়ে মালোপাড়া এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছে। ভাঙ্গন এলাকার কিছু কিছু ঘরে নিচের অর্ধেক মাটি নদে ধ্বসে পড়েছে। ঘরগুলি নদের উপর ঝুলছে। যে কোন সময় নদীর গর্ভে ভেঙ্গে পড়তে পারে। এসব পরিবারের বসবাসরত মানুষগুলো নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। অতিসত্বর ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে রাস্তাসহ বাকী পরিবারের ঘরবাড়ী এবং ফসলী জমি নদেগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাইকগাছা উপজেলার ৮নং রাড়ুলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড রাড়ুলী গ্রামে মালোপাড়া অবস্থিত। মালোপাড়ার পাশ দিয়ে কপোতাক্ষ নদ বহমান। দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর যাবৎ মালোপাড়ায় এলাকা কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গন অব্যহত রয়েছে। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৭০টি পরিবার বসবাস করছে। ইতিপূর্বে প্রায় ৫০টি পরিবার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বাড়ীঘর জমি হারিয়ে অন্যত্র গিয়ে বসবাস করছে। রাড়ুলী ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ গাজী জানান, ৪০ বছরের অধিককাল ধরে মালোপাড়া এলাকায় কপোতক্ষের ভাঙ্গন অব্যহত আছে। দীর্ঘদিন যাবৎ দাবী জানানোর পরেও ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ভাঙ্গন এলাকায় বসবাসরত আব্দুস সাত্তার সানা জানান, তিনি এ পর্যন্ত ৫ বার বাড়ী বদল করেছেন। এবার ঘরটি নদে ভেঙ্গে গেলে তার আর যাওয়ার কোন জায়গা থাকবে না। মালোপাড়ার সূর্যকান্ত বিশ্বাস জানান, প্রতিবার জনপ্রতিনিধিরা ভাঙ্গন পরিদর্শন করে যায় কিন্তু ভাঙ্গন রোধে কোন কাজ করা হয় না। তিনি ৩ বার বাড়ী বদল করেছেন। এরকম মালোপাড়ার মনোরঞ্জন বিশ্বাস, উত্তম বিশ্বাস, তপন বিশ্বাস, বাবু বিশ্বাস, পবন বিশ্বাস, রতন বিশ্বাস, অমল বিশ্বাস, সুকুমার বিশ্বাস তারা সবাই ১ থেকে ২ বার করে বাড়ী বদল করেছেন। নদের তীরে যে জায়গায় তারা বসবাস করছে এই জায়গা ভেঙ্গে তাদের নতুন করে ঘর বাঁধা কোন জায়গা থাকবে না। সূর্যকান্ত বিশ্বাস বলেন, বিগত বছরের ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় প্রায় ৩০/৪০ ফুট জায়গায় জিও ব্যাগে বালি ভরে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বাকী অংশের কাজ না করায় ভাঙ্গন অব্যহত রয়েছে। অতিসত্বর ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে মালোপাড়ার বাসিন্দারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।এব্যাপারে রাড়ুলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ জাহান আলী জানান, বিগত বছরে এমপি সাহেবের মাধ্যমে ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগের বরাদ্দ নেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার সামান্য কিছু কাজ করে বাকী কাজ না করে চলে যাওয়ায় মালোপাড়ার ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ গোলদার জানান, মালোপাড়ার কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গন রোধে বার বার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছি। কিন্তু ভাঙ্গন রোধে কোন পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। আমরা মালোপাড়ার ভাঙ্গন রোধে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য মানববন্ধনের আয়োজন করেছি।এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড পাইকগাছার এসও রাজু হাওলাদার জানান, রাড়ুলীর কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে চলতি বছরের চাহিদা পাঠিয়েছি। এখন বরাদ্দ হয়নি, বরাদ্দ হলে কাজ শুরু করা হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকি বলেন, রাড়ুলীর মালোপাড়ার কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙ্গনের ব্যাপকতা তীব্র রয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও-কে জানিয়েছি। কপোতাক্ষ নদের রাড়ুলী মালোপাড়ার ভাঙ্গন এলাকার বাসিন্দারা ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।