খবর ৭১: এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ প্রাদেশিক রাজধানী তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী খালিদ পায়েন্দা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) পর্যন্ত অন্তত ৯টি প্রাদেশিক রাজধানীর তালেবানের হাতে পতন হয়েছে।
মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ ও আলজাজিরা বলছে, ইতিমধ্যে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শুল্ক চৌকিগুলো তালেবানের হাতে চলে গেছে। এতে আফগান সরকার অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বুধবার (১১ আগস্ট) ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আফগান অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফি বলেন, শুল্ক আদায়ের উৎসগুলো তালেবানের হাতে চলে যাওয়ায় পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন অর্থমন্ত্রী খালিদ।
তিনি বলেন, দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে তাকে বিদেশ যেতে হচ্ছে। তবে কখন তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, তার পরিষ্কার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
দেশটি থেকে মার্কিন বাহিনীর প্রত্যাহারের ঘোষণা আসার পর থেকেই তালেবানের বিজয়ের ডঙ্কা বেজেই চলছে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলীয় আফগান প্রদেশগুলোর সঙ্গে রাজধানী কাবুলকে সংযোগকারী প্রধান মহাসড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তারা।
সর্বশেষ বিজয়ী তিনটি প্রাদেশিক রাজধানী হচ্ছে—কাবুল থেকে দেড়শ কিলোমিটার উত্তরের বাগলান প্রদেশের রাজধানী পুল-ই-খুমরি, পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ফারাহের একইনামের রাজধানী ও অসমতল বাদাখসানের রাজধানী ফাইজাবাদ। এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ৯টি প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহীরা।
এর আগে তালেবানের দখলে নেওয়া ছয় প্রাদেশিক রাজধানী হচ্ছে—নিমরোজ প্রদেশের জারানজ, জাওজানের শেবারগান, কুন্দুজ, সার-ই-পুল, তাখার প্রদেশের তালোকান এবং সামানগান প্রদেশের আইবাক।
আফগান সরকার এখন দুটি সংকটের মধ্যে রয়েছে: বিদ্রোহীদের অব্যাহত চাপে সরকারি বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়েছে এবং তাদের মধ্যে পরিশ্রান্তি চলে এসেছে। তারা লড়াইয়ের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এভাবে তালেবানের বিজয়ে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ বাড়ছে।
তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন আফগান রাজধানী কাবুল তালেবানের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে কিনা সরকারি বাহিনী, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অর্থনৈতিক ইঞ্জিন বলে খ্যাত ও বলখ প্রদেশের রাজধানী মাজার-ই-শরিফকে রক্ষা করাই আফগান সরকারের জন্য এখনকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে শহরটি ঘিরে রেখে কাবুল থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তালেবান।
মাজার-ই-শরিফের পতন হলে তা কাবুলের আশরাফ গনি সরকারের জন্য ধ্বংসাত্মক বিপর্যয় হয়ে দেখা দিতে পারে।
বাগলান প্রদেশের সরকারপন্থী মিলিশিয়া কমান্ডার মোহাম্মদ খামিন বাগলানি বলেন, আমরা এখন বড় ধরনের চাপের মধ্যে আছি। আমাদের আর কোনো প্রতিরোধ শক্তি নেই। শহরের সব এলাকার পতন ঘটেছে।
তার বাহিনী দক্ষিণ দিকের নিকটস্থ জেলাগুলোর দিকে পিছুহটেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাগলান প্রদেশের কাউন্সিল সদস্য বিসমিল্লাহ আত্তাশ বলেন, পুল-ই-খুমরির চারপাশে গত কয়েক মাসে ব্যাপক লড়াইয়ের পরেও মঙ্গলবার রক্তপাতহীনভাবে শহরটির পতন ঘটেছে।
পুল-ই-খুমরি শহরটিতে দুই লাখের বেশি বাসিন্দা রয়েছেন। এই শহরটি ভিতর দিয়ে যাওয়া মহাসড়কটির সঙ্গে উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলোর সংযোগ রয়েছে, যা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তালেবান।
আর গত কয়েক বছর ধরেই ফারাহ প্রদেশের রাজধানী দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছিল তালেবান। সেখানকার পুলিশ কর্মকর্তা গুলবুদ্দিন বলেন, শহরের বাইরের কয়েক মাইল দূরের সেনাবাহিনীর একটি প্রধান কার্যালয়ের দিকে সরকারি বাহিনী পালিয়ে গেছে। এমনটি প্রধান কারাগারটিও দখলে নিয়েছে তালেবান।
ফাইজাবাদের পতনের খবর নিশ্চিত করেছেন বাদাখশান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য আহমাদ জাওয়িদ মোজাদ্দাদি। ৩৩ হাজার অধিবাসীর ছোট্ট শহরটিতে গত এক সপ্তাহ ধরে লড়াই চলছিল।
ফাইজাবাদ কারাগারের দায়িত্বরত কর্মকর্তা কর্নেল গুল খান কুফি বলেন, সরকারি বাহিনী বিমানবন্দরের দিকে পালিয়ে গেছে। আমি ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের ফোন দিলেও তারা সাড়া দেননি।