খবর৭১ঃ চুল মানুষের সৌন্দর্য্যের অন্যতম অংশ। নারীর সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি পুরুষের সৌন্দর্য্যের ক্ষেত্রেও চুল কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। চুল পড়াকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলা হয় এলোপেশিয়া। প্রতিদিন আমরা ৫০-১০০টি মাথার চুল হারাই। এটা ধরা পড়ে না কারণ একই সময়ে মাথায় নতুন চুল গজাচ্ছে। চুল পড়া তখনই একটি সমস্যা যখন পড়ে যাওয়া চুলের জায়গায় নতুন চুল গজায় না। টাক পড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে বয়স বাড়ার সাথে সাথে বংশগত কারণে ক্রমাগত মাথা থেকে চুল পড়া। চুল পড়ার সমস্যা নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি।
বংশগত কারণে চুল পড়তে পারে। গর্ভধারণ, শিশুর জন্ম দেয়ার পর, মেনোপজ বা থাইরয়েডের কারণে শরীর হরমোনের পরিবর্তনে চুল পড়তে পারে। ব্লাড প্রেশার, ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডিপ্রেশান, ইত্যাদির ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় মাথার চুল পড়তে পারে।
প্রচন্ড মানসিক কষ্ট বা চাপের কারণেও অনেকে মাথার চুল হারান। এটা সাধারণতঃ ক্ষণস্থায়ী হয় এবং চুল আবার গজায়।
চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে চাইলে ডায়েট চার্টে রাখুন ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার। তেলযুক্ত মাছ ও বাদামে মিলবে ওমেগা। তবে সাপ্লিমেন্টারি খেতে চাইলে আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।
খাবার তালিকায় রাখুন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। ওজন ও বয়স অনুযায়ী প্রতিদিন আমাদের ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন হয়।
গবেষণায় দেখা যায় যেসব খাবারে কাঁচা শাকসবজি এবং ভেষজ আছে যেমন, মেডেটেরেনিয়ান ডায়েট, সেসব খাবার খেলে চুল পড়া কমতে পারে। গবেষণাটিতে আরও দেখা যায় যারার সবচেয়ে বেশি পার্সলি, বেসিল, সালাদের সবুজ পাতা, ইত্যাদি খেয়েছেন সপ্তাহে তিন দিনের বেশি, তারা উপকারিতা পেয়েছেন অন্যান্যদের তুলনায় বেশি।
চুলের গ্রন্থি তৈরি হয়েছে কেরাটিন নামক প্রোটিন দ্বারা। ২০১৭ সালে ১০০ জন টাক পড়া মানুষের উপর চালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে সবার মধ্যেই এমিনো এসিডের অভাব আছে। এমিনো এসিড হচ্ছে প্রোটিনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই গবেষকরা মনে করেন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে চুল পড়ার প্রবণতা কমতে পারে। যেসব খাদ্য স্বাস্থ্যকর প্রোটিন আছে ডিম, মাছ, মুরগি, বাদাম, বিন, মটর শুঁটি, ইত্যাদি।
ভিটামিন এ-তে আছে রেটিনয়েড, যা চুল গজানোর হার বৃদ্ধি করে। এছাড়া এই ভিটামিন সিবাম উৎপাদন করে এবং চাঁদিকে সুস্থ রাখে। পালং শাক, মিষ্টি আলুতে ভিটামিন এ আছে।
বিজ্ঞানীদের মতে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, আয়রন, সেলেনিয়াম, এবং জিঙ্ক – এ সবই চুল গজাতে সাহায্য করে। তাও মাল্টি ভিটামিন খেলে চুল পড়া রোধ হতে পারে।
জিনসেং-এ ফাইটোকেমিক্যাল থাকায় চুল গজাতে সহায়তা করে। তবে জিনসেং খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।
বিটে থাকা নাইট্রেট রক্ত সঞ্চালনের উন্নতিতে সাহায্য করে, একটি ব্রিটিশ জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজি স্টাডি অনুসারে, বিট চুলের ফলিকলে অক্সিজেন এবং পুষ্টি আনতে পারে।
পালং শাক আয়রন সমৃদ্ধ, এতে রয়েছে সিবাম, যা চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। শাক শরীরকে ওমেগা-৩ এসিড, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং আয়রনও সরবরাহ করে।
চিকেনে আছে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড , যা আরাকিডোনিক অ্যাসিড(এএ) নামে পরিচিত, চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ক্যাপসিকামে আছে ভিটামিন সি-র অফুরন্ত জোগান, যা ত্বককে রাখবে তরতাজা। চুলের গোড়ায় জোগাবে পুষ্টি।
ডিমে থাকে বায়োটিন নামে বি ভিটামিন, যা চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ডগা ভাঙা চুল-নখকে শক্তিশালী করে। পাতলা চুলের সমস্যা দূর করে।
দুধের প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম চুল পোক্ত করে। নরম, কোমল, আর্দ্র রাখে চুলের আগা থেকে গোড়া। ময়শ্চরাইজড করে।
আখরোট এবং বাদাম খাওয়া চুলের জন্য খুব ভাল । বিশেষজ্ঞরা বলেন,এতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যার ফলে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকে। চুল পড়া রোধ করতে বাদাম ভাল কাজ করে। আপনার ডায়েটে রোজ থাকুক আমন্ড।
ওটমিলে আছে হাই ফাইবার, যা পেট ভাল রাখে। সুস্থতা বজায় রাখে। পরোক্ষে চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে।
সূর্যমুখী ফুলের বীজ। এতে থাকে ভিটামিন বি৫, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড নামে পরিচিত। স্ক্যাল্পে রক্ত প্রবাহ এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে সূর্যমুখী বীজ।
দই খাওয়া শরীরের পক্ষে বেশ ভাল। এর মধ্যে থাকা খনিজ হেয়ার ফলিকলে পুষ্টি জোগায়। চুলের গোড়া শক্ত করতে ও চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে।
চুলের বৃদ্ধি দ্রুত করতে চাইলে নারকেল তেল ভীষণ জরুরি। এতে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন নারকেল তেল ম্যাসাজ করুন চুলে।
ধূমপানের অভ্যাস থাকলে সেটি ত্যাগ করুন আজই।
নিয়মিত চুলের আগা ছেঁটে ফেলুন। দীর্ঘদিন আগা না ছাঁটলে চুল বাড়ে না সহজে।
চুল ভালো রাখার জন্য সঠিক ডায়েট প্ল্যান জরুরি। ভিটামিনযুক্ত খাবার খান প্রতিদিন। ভিটামিন এ, বি, সি, বায়োটিন, জিঙ্ক ও আয়রনযুক্ত খাবার খান।
নিয়মিত ম্যাসাজ করুন চুলের গোড়া। এটি বাড়াবে চুলের বৃদ্ধি। রাতে ঘুমানর আগে শুকনো চুলের গোড়া ম্যাসাজ করতে পারেন দশ মিনিট। এরপর উল্টো দিক থেকে আঁচড়ে নিন। হেয়ার প্যাক অথবা গরম তেল দিয়েও গোসলের আগে খানিকক্ষণ ম্যাসাজ করুন চুলের গোড়া।