অনলাইনভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাদের প্রিয় সৈয়দপুরের খাদ্য সহায়তা বিতরণ

0
360

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী): নীলফামারীর সৈয়দপুরে ব্যতিক্রমধর্মী পন্থায় খাদ্য সহায়তা বিতরণ করছে অনলাইনভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর। চলমান লকডাউন পরিস্থিতির শিকার অসহায়, দুস্থ, নিম্নবিত্ত্ব, মধ্যবিত্ত্ব পরিবারের মাঝে কোন রকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই রাতের আঁধারে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ওই খাদ্য সামগ্রীর তুলে দেওয়া হচ্ছে। আর এ সব খাদ্য সামগ্রী মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, আটা, তেল, আলু প্রভূতি।
এভাবে রাতে আঁধারে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। গড়ে প্রতিদিন ২০-২৫ জন নানা বয়সের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধি-নিষেধ সারাদেশের মতো এ উপজেলায় অব্যাবহভাবে চলছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন দিন আনে দিন খায় এমন খেটে খাওয়া,নিম্নবিত্ত্ব ও মধ্যবিত্ত্ব পরিবারগুলো। বেশি সমস্যায় পড়েছেন মধ্যবিত্ত্বরা। তারা লোক লজ্জায় কারো কাছে না পারছেন কোন কিছু চাইতে বা মুখ ফুটে কোন কিছু বলতে। তাই অনলাইনভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর এর উদ্যোগে ব্যতিক্রমধর্মী পন্থায় নিম্নবিত্ত ওমধ্যবিত্তদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী লকডাউন শুরু থেকে সংগঠনের সদস্য আজিম, সাজু, সামিউল, রাজা, শাহবাজ, জয়, শাহজাদা, জীবন, ইমরান, সাকিব ও নওশাদ আনসারীসহ অন্যান্যরা পরিস্থিতির শিকার এ সব পরিবারগুলোকে রাতের বেলা খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন। সংগঠনের অনেক সদস্যের মধ্যে কাজ করছেন তারা মাত্র ১১ জন। দিনের বেলা তারা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। আর তারা খাদ্য সহায়তা বিতরেণর জন্য বের হন রাতের বেলা। এক এক জনের হাতে থাকে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট। লকডাউনে পরিস্থিতির শিকার নিম্নবিত্ত্ব, মধ্যবিত্ত্ব পরিবারগুলোর বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খাদ্য সহায়তার প্যাকেট তুলে দিচ্ছে তারা।
গতকাল রোববার (১ আগস্ট) রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সংগঠনের সদস্যরা সৈয়দপুর শহরের গোলাহাট এলাকায় বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ঘুরছেন। তাদের প্রত্যেকের হাতে খাদ্য সামগ্রী ভর্তি এক একটি প্যাকেট। লোক লজ্জার ভয়ে চাইতে পারেন না এমন পরিবারের খোঁজ করে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে খাদ্যসামগ্রী পাকেট (ব্যাগ)।
আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর সংগঠনের খাদ্য সামগ্রী সহায়তা পেয়েছেন এমন শাকিল। তিনি বলেন, স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ছোট সংসার। হকারী করি আমি। কিন্তু লকডাউনে সব বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। চাইতে পারছি না কারো কাছে। ভাবতেও পারিনি রাতে ঘুম থেকে তুলে কেউ খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাবে। আল্লাহ তাদের সর্বদা ভাল রাখুক।
সংগঠনের আজিম, সামিউল, রাজাসহ অন্যানরা জানান, আমরা মূলত রাতে বের হয়। লকডাউন পরিস্থিতিতে যারা আয় রোজগার করতে না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তাদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। মূলতঃ সৈয়দপুরের মধ্যে গোলাহাটে বেশি অভাবী মানুষ তাই এই এলাকাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি।
আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর এর প্রতিষ্ঠাতা নওশাদ আনসারী বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা মানতে গিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। তাঁরা যেন খাদ্য সঙ্কটে না পড়েন, সে জন্য আমরা এই খাদ্য সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের খাদ্য সহায়তা যাতে প্রকৃত অসহায় মানুষজনের হাতে পৌঁছায় সেটা মাথায় রেখে এ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। গত ঈদুল আজহার আগে ও পরে জারিকৃত লকডাউনে এ পর্যন্ত আমরা রাতে বের হয়ে পরিস্থিতির শিকার এরূপ প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। এই কার্যক্রম লকডাউন থাকাকালীন পর্যন্ত চলবে বলে জানা তিনি।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ওসি) মো. রমিজ আলম বলেন, আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর সংগঠনটি নীরবে নিভৃতে খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছে আমরা লক্ষ্য করেছি। খাদ্য সহায়তার যে প্রকৃত হকদার তাদের বাসায় গিয়ে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছে তারা। এরূপ কার্যক্রমে আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর এর সকল সদস্যদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here