বেনাপোল কাস্টমসে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬২৪৫ কোটি টাকা

0
278

শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল প্রতিনিধি : বেনাপোল কাস্টমস হাউসে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি পণ্য থেকে ৬ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রবিবার, বেনাপোল কাস্টমস হাউসের পরিসংখ্যন শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তানভির মেহেদী রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষে আদায় হয়েছে ৪ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। বছরটিতে রাজস্ব আয়ের গ্রোথ অন্যন্য বছরের চাইতে বেশি হলেও ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা।

এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি ছিলো ১১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ তে বেশি আদায় হয়েছিল ৪৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঘাটতি ছিলো ২০৩ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঘাটতি ৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ২০১৩-১৪ তে ঘাটতি ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ তে ঘাটতি ৪৫২ কোটি ৮৯ লাখ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমান ছিলো ১৯৪ কোটি টাকা।

এদিকে চলতি অর্থবছরে বিশাল অংকের এ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা আদায় নিয়ে সংশয় রয়েছে সর্ব মহলে। তারা বলছেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাস্টমস ও বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। তা না হলে কখনো এত বড় অংকের রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে না।

জানাযায়, যোগাযোগ ব্যব¯’া সহজ হওয়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এপথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় ব্যবসায়ীরা চাহিদা মতো পণ্য আমদানি করতে পারেন না। এতেই বার বার রাজস্ব আয়ে ধ্বস নামছে।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ¦ মফিজুর রহমান সজন বলেন, চলতি অর্থবছরে এত বড় অংকের রাজস্ব আদায় করা কঠিন হয়ে দাড়াবে। কারন হিসেবে তিনি বলেন একদিকে করোনা পরি¯ি’তি, অন্য দিকে সুষ্ঠভাবে বাণিজ্য সম্পাদনে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও বেনাপোল বন্দরের অব্যব¯’াপনা নিয়ে অনেকবার বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করেছেন। তবে কাঙ্খিত উন্নয়ন হলে এবন্দর থেকে লক্ষ্য মাত্রার দ্বিগুণ রাজস্ব আয় করা কাস্টমসের পক্ষ্যে সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

আমদানি কারক ইদ্রিস আলী বলেন, বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তা ব্যব¯’া সন্তোষজনক না। আমদানি কারকদের নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে বন্দরে পণ্য পাহারা দিতে হয়। বন্দর থেকে পণ্য চুরি, বারবার রহস্যজনক অগ্নিকান্ডে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্র¯’্য হয়ে ব্যবসা বন্ধ করেছেন। এছাড়া এ বন্দর দিয়ে বৈধ পথে মাদক দ্রব্য প্রবেশ বেড়ে যাওয়ায় ঝামেলা এড়াতে রুচীশীল ব্যবসায়ীদের অনেকে অন্য বন্দরে চলে গেছেন। এসব কারনে পর পর ৮ থেকে ৯ বছর ধরে এ বন্দর থেকে আমদানি পণ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চাহিদা মতো রাজস্ব আহরণ করতে পারছেন না।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, এত বড় অংকের রাজস্ব আদায় অনিশ্চিত। কারণ, কাস্টমস ও বন্দরের নানান অব্যব¯’াপনায় আমদানি কমেছে এ বন্দর দিয়ে। বেনাপোল কাস্টমসে আমদানি পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষনে প্রয়োজণীয় সব ব্যব¯’্যা নাই। এতে খুলনা ও ঢাকা থেকে পরীক্ষা করাতে মাসের অধিক সময় লেগে যায়। ফলে দীর্ঘ সময় পণ্য চালান আটকা পড়ে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্র¯’্য হয়। বেনাপোল কাস্টমস হাউসে বিএসটি আই ও বিএসআইআরের শাখা ¯’াপনের দাবী আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছেড়েছেন। বন্দরে চাহিদা মতো জায়গা না থাকায় পণ্য খালাসের জন্য দিনের পর দিন ট্রাক দাড়িয়ে থাকে। এতে আমদানি খরচ বেড়ে যায়। কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আয় কমার ক্ষেত্রে এটিও একটি বড় কারণ বলে মন্তব্য করেন এ ব্যবসায়ী।

ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, ব্যবসায়ীরা যেখানে সুবিধা পাবেন সে পথে আমদানি, রফতানি বাণিজ্যে আগ্রহী হবেন এটাই স্বাভাবিক। চট্রগ্রাম বন্দরে অনেক সুবিধা বিদ্যমান তাই ব্যবসায়ীরা দিন দিন সে পথে আমদানিতে ঝুকছেন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কাস্টমস ও বন্দরে বৈধ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে ব্যবসায়ীরা এ পথে আবার ফিরবেন।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম জানান, আমদানি বাণিজ্যের ক্ষত্রে বন্দরে পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ হ”েছ না। এতে কয়েক বছর ধরে রাজস্বের লক্ষমাত্রা পূরণ অনিশ্চিত হয়ে দাড়া”েছ। আমদানির চাহিদা বাড়লেও ৫ বছর আগে প্রতিদিন যে পরিমান পণ্য আমদানি হতো এখনও তার পরিমান সে জায়গাতে রয়েছে। আমদানি পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে বন্দরে রাস্তার সংকীর্ণতা রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা চাহিদা মতো পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। বার বার বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে বলা হলেও নজরদারী কম। যদি চাহিদা মত সব ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয় তবে আমদানি বাড়বে রাজস্ব ও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল জানান, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে ইতিমধ্যে অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পণ্যাগারের জন্য জমি অধিগ্রহন, নতুন পণ্যগার নির্মান ও বন্দর এলাকায় রাস্তাঘাটের অনেকটা উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। এছাড়া বন্দরে আরো জমি অধিগ্রহন ও পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে। যে সব পণ্যে বেশি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে সেসব পণ্য আলাদা নিরাপদ জাইগায় রাখার ব্যব¯’া নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের চাহিদার কথা ভেবে আরো কিছু উন্নয়নমূলক কাজের চিন্তা ভাবনা চলছে। এসব উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে এ বন্দরে বাণিজ্যে আরো গতি বাড়বে বলে জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here