স্টাফ রিপোটার,বাগেরহাট: রেমিট্যান্স যোদ্ধা (বিদেশ ফেরত) ইমরান পাইক মুক্তির দুটো কিডনি-ই নষ্ট। অর্থাভাবে চিকিৎসাও বন্ধ। তিন সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন ৫০ বছর বয়সী এই রেমিট্যান্স যোদ্ধা। মাত্র সাত মাসে ৬ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেও সুস্থ্য হতে পারেননি। এখন টাকার অভাবে ডায়ালাইসিসও বন্ধ তার। এই অবস্থায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
বাগেরহাট পৌরশহরের পূর্ববাসাবাটি এলাকার আব্দুল হামেদ পাইকের ছেলে ইমরান পাইক মুক্তি। ২০০৮ সালে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে একটু ভাল থাকার আসায় দুবাই যায় ইমরান। বিধিবাম, ট্যুরিস্ট ভিসা হওয়ায় কিছুদিন পালিয়ে থেকে বাড়িতে ফিরে আসেন। বাবার জমি বিক্রি করে আত্মীয় স্বজনের দেনা পরিশোধ করেন। বাবার জমি বিক্রির টাকায় ২০০৯ সালে আবারও তিন বছরের ভিসায় দুবাই যান ইমরান পাইক। তিন বছরের বৈধ ভিসায় দুবাই গেলেও দশ বছর কাজ করেন পালিয়ে থেকে। এক পর্যায়ে বৈধ কাগজপত্র তৈরি করে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে আসেন ইমরান পাইক মুক্তি। এসে কিছুদিন থেকে আবারও দুবাই যান তিনি। এবারও ভাগ্য সহায় হয়নি মুক্তির। করোনায় কাজবন্ধ থাকায় বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে ভরন পোষন মিটিয়েছেন নিজের। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর আবারও দেশে ফিরে আসেন ইমরান পাইক মুক্তি।
বাড়িতে পৌছানোর তিনদিন পরেই অসুস্থ্য হয়ে পড়েন তিনি। চিকিৎসকদের পরামর্শ ও পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে জানতে পারেন তার দুটো কিডনি-ই নষ্ট।বাগেরহাট সদর হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা শেখ আবু নাসের বিষেশায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ্য হতে পারেননি ইমরান পাইক মুক্তি। সর্বশেষ গেল তিনমাস ধরে রাজধানীর মিরপুরস্থ কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসকদের তত্বাবধায়নে রয়েছেন।প্রতি সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করতে হয় তাকে।
ইমরান পাইক মুক্তি বলেন, ১০-১১ বছর বিদেশে থেকেছি। জীবনে কিছুই করতে পারিনি।করোনাকালে প্রায় একবছর বেকার থেকে বাড়ি এসেই অসুস্থ্য হয়ে পড়েছি। ৬-৭ মাসে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজের, পরিবারের সবই শেষ করেছি। সর্বশেষ বাড়ির দুই কাঠা জমিও বন্ধক রেখে ঋণ এনেছি। প্রতিসপ্তাহে খুলনা আবুনাসের বিষেশায়িত হাসপাতালে দুইবার ডায়ালাইসিস করি। ডায়ালাইসিস, ইনজেকশন, ঔষধ সব মিলিয়ে সপ্তাহে বার তের হাজার টাকা ব্যয় হয়। টাকা জোগার করতে না পাড়ায় গত সপ্তাহে ডায়ালাইসিস করতে পারিনি। তিনটি সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে খুব বিপদে রয়েছি। জানি না আল্লাহ কি করবেন।চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
প্রতিবেশী মনিরা পারভীন বলেন, তিনটি সন্তান নিয়ে ইমরান ও তার স্ত্রী যে কত কষ্টে দিন কাটায় তা না দেখলে বোঝা যায় না। প্রায় দিন ই ঠিক মত খেতে পারে না তারা। করোনার সময় মাঝে মাঝে আমরা যতটুকু পারি সহযোগিতা করি।যদিকোন ধনী মানুষ একটু এই পরিবারটার উপর দয়া করত তাহলে হয়ত পরিবারটি একটু স্বস্তিতে থাকতে পারত।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, ইমরান পাইকের বিষয়টি আমি শুনেছি। তার পরিবারকে সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন করতে বলেছি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়মের মধ্যে তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা
ইমরানের স্ত্রী আমেনা আক্তার লাকি বলেন, আমাদের এমন অবস্থা যে নবম শ্রেণিতে পড়া ছেলে আসিফ ও ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়া মেয়ে আবিদা সুলতানার পড়াশুনা তো বন্ধ-ই। ৯ মাস বয়সী ছোট মেয়ে আফিফাকেও একটু বাড়তি খাবার খাওয়াতে পারি না। স্বামীর চিকিৎসার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ করেছি। বাবা, মা, ভাইসহ এমন কোন আত্মীয় নাই যে তাদের কাছ থেকে কম বেশি টাকা ধার করি নেই। আসলে এখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন নিয়মিত স্বামীর ডায়ালাইসিসও করাতে পারছি না। ধনী মানুষদের দয়া ভিক্ষা চাই। আমার স্বামীকে নিয়ে দুটো ডাল ভাত খেয়ে বাচতে চাই এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মধ্য বয়সী এই নারী।
ইমরান পাইক মুক্তিকে সাহায্য পাঠাতে পারেন ব্যাংক হিসাবে অথবা বিকাশে। ব্যাংক হিসাবের নামঃ এমডি ইমরান পাইক মুক্তি, হিসাব নং-১৫৩০৬, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ, বাগেরহাট শাখা। বিকাশ নং-০১৭২৬-৪৬৪১৭৭