খবর৭১ঃ করোনাকালে আয় কমলেও ভোক্তা ব্যয় অনেক বেড়েছে। ঢাকায় ২০২০ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় গত ৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এসময় টিকে থাকতে বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ও ভোক্তা স্বার্থসংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বুধবার এটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং সেবা-সার্ভিসের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০১৯ সালে এটি ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ ও ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এর আগের বছর তা ছিল ৬ শতাংশ ও ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। ক্যাব রাজধানীর ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা-সার্ভিসের মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য এ ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবা-সার্ভিসের সংগৃহীত মূল্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তবে এই হিসাবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রকৃত যাতায়াত ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ক্যাবের সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আবদুল হান্নান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত ৩ বছরের মধ্যে ২০২০ সালে রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয় সর্বাধিক বেড়েছে। অন্যদিকে, এ সময়ে করোনা মহামারির প্রভাবে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের আয়-রোজগার ব্যাপকভাবে কমেছে। ফলে, ২০২০ সালে এ শ্রেণির ভোক্তাদের জীবনমান বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে চালের দাম ২০ শতাংশ, মসুরের ডাল ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ, মসলা ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ, শাকসবজি ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ, গরু-খাসির মাংস ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, মুরগির দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ ছাড়া ডিমের দাম ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ, মাছের দাম ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ ও গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ক্যাবের প্রতিবেদন মতে, নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের বাড়িভাড়া গড়ে ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া ওয়াসার পানির দাম প্রতি হাজার লিটারে ২৫ শতাংশ, আবাসিকে বিদ্যুতের দাম ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং বাণিজ্যিকে বিদ্যুতের দাম ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে।
ক্যাব জানায়, এ সময় সরিষার তেলের দাম কেজিতে ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, ডালডার দাম ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ ও খোলা আটাতে দাম কমেছে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর স্থিতিশীল অথবা অপরিবর্তিত ছিল লবণ, চা-পাতা, দেশি-বিদেশি কাপড়, গেঞ্জি, তোয়ালে ও গামছার দাম।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইএফসির সমীক্ষা অনুযায়ী করোনার কারণে এসব খাতে কর্মরত ৩৭ শতাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। অন্যান্য খাতেও কর্মসংস্থান কমেছে। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী ছাঁটাই এবং বেতন কমানো হয়।
প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বলা হয়েছে, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সম্প্রতি সরকার বিদ্যুৎ খাতে বার্ষিক যে কয়েক হাজার টাকা ভর্তুকি দিয়েছে, তা মূলত বেসরকারি অলস বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে ব্যয় হয়েছে। এর সুফল ভোক্তা পায়নি। জনগণের উপকার হয়নি। বরং উৎপাদন ব্যয় মেটানোর জন্য দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
ব্যাংকিং ও বিনিয়োগ খাত নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সরকার নির্ধারিত হারে ঋণ বিতরণের ফলে বৃহৎ শিল্প ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসার ক্ষেত্রে তা হিতে বিপরীত হয়েছে। এবং ঋণপ্রবাহ ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রীর দেওয়া পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বলে, এটা স্পষ্ট যে করোনাকালে বিত্তবানেরা আরও বিত্তশালী হয়েছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের আয়-রোজগার কমেছে। এ ছাড়া কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এমন মানুষের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন-ক্যাবের সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম প্রমুখ।