খবর৭১ঃ জি-৭’র পর এবার চীন ও রাশিয়াকে ঠেকানোর মিশনে নামল ন্যাটো। আর এই মিশনে বরাবরের মতোই যোগ দিল যুক্তরাষ্ট্র। এই দুটি দেশের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কঠোর বার্তাও দিয়েছেন পশ্চিমা সামরিক জোটটির নেতারা। বিশ্বে চীনের ক্রমবর্ধমান উত্থান ঠেকাতে সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আরও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জোট প্রধান জেনস স্টেলটেনবার্গ। তিনি বলেন, চীনের বিরুদ্ধে ন্যাটোকে আরও শক্তিশালী নীতি ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, চীন ও রাশিয়ার সৃষ্ট নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে ন্যাটোকে। খবর সিবিসি ও এএফপির।
চলতি সপ্তাহে ব্রিটেনের কর্নওয়ালে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে চীনকে টেক্কা দিতে এবার দেশটির লাখো কোটি ডলারে প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে’র (বিআরআই) বিকল্প হিসাবে ‘বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি বৈশ্বিক অবকাঠামো পরিকল্পনা ঘোষণা করেন বিশ্বের শিল্পোন্নত সাত দেশের নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে নতুন ওই পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করা হবে। সোমবার থেকে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে শুরু হয়েছে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন। একদিন আগে রোববার কানাডার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টেলটেনবার্গ বলেন, চীনের সামরিক খাতের বাজেট বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দেশটির
নৌবাহিনী বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী। চীন ধীরে ধীরে সামরিক খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, যা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টেলটেনবার্গ বলেন, চীন বিশ্বশান্তি রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়। হংকংয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হামলা চালিয়েছে চীন। আটক করা হয়েছে হংকংয়ের আন্দোলন কর্মীদের। অধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর, কাজাখ ও অন্য সংখ্যালঘুদের। বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হয়েছে সংখ্যালঘু মুসলিমদের। একই সঙ্গে চীন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ দেশের নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। চীনের এমন আচরণকে মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলছেন ন্যাটো প্রধান। আট দিনের ইউরোপ সফরের অংশ হিসাবে সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে এসে পৌঁছান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পৌঁছেই রাশিয়া ও চীনের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেন
তিনি। বলেন, ন্যাটোকে অবশ্যই এই দুই দেশের সৃষ্ট চ্যালেঞ্জের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে চীন। দেশটি প্রতি বছর ১১ হাজার ২৫৬ মেগা টন কার্বন নিঃসরণ করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় চীনকে এখনই কার্বন নিঃসরণের হার কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন, ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টেলটেনবার্গ। এ ছাড়া দক্ষিণ চীন সাগর ব্যবহারে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ন্যাটো মহাসচিব। এদিকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে চীনে আটক কানাডার দুই নাগরিকের মুক্তি দাবি করেছেন জেনস স্টেলটেনবার্গ। তিনি বলেন, মাইকেল কোভরিগ ও মাইকেল স্পাভরকে আটক রাখার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। চীনের এসব দমন-নিপীড়ন নীতি ন্যাটোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ন্যাটো মহাসচিব দাবি করেন, চীনকে এসব নিপীড়ন এখনই বন্ধ করতে হবে।
ন্যাটোর আগে চীনের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছিল জি-৭। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালে শেষ হওয়া সম্মেলনে চীনকে ঠেকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে জোটটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) বিকল্প আরেকটি প্ল্যাটফর্ম বাস্তবায়নের উদ্যোগ। যার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবে ধনী দেশগুলোর এই জোট। এ ছাড়া চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে তিনি এ আহ্বান জানান। বলেন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা চালিত বিল্ড বেটার ওয়ার্ল্ড পরিকল্পনাটি চীনা প্রকল্পটির বিকল্প হতে পারে।