খবর৭১ঃ চীন থেকে দেড় কোটি ডোজ করোনার টিকা আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। সোমবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে এ তথ্য জানান তিনি। এছাড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
অসীম কুমার উকিলের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীন সরকারের কাছ থেকে দেড় কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা ‘সিনোভ্যাক’ কেনার জন্য অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই টিকা দ্রুত দেশে আনার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, চীন সরকার থেকে ৫ লাখ ডোজ টিকা উপহার এসেছে। এই টিকা ২৫ মে থেকে প্রয়োগ শুরু হয়েছে। আরও ৬ লাখ ডোজ অনুদান হিসাবে শিগগিরই পাওয়া যাবে।
একই প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সেরাম থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের চুক্তি হয়েছিল। এর মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ পাওয়া গেছে। চুক্তি মোতাবেক বাকি ২ কোটি ৩০ লাখ ডোজ সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সেরামের সরবরাহকৃত ৭০ লাখ এবং ভারত সরকারের উপহারে পাওয়া ৩২ লাখÑ এই ১ কোটি ২ লাখ ডোজের মধ্যে ১ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। রাশিয়া থেকে ১ কোটি ডোজ স্পুটনিক ভি কেনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকাদান শিগগিরই শুরু হবে।
মন্ত্রী জানান, সরকার করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন দেশ ও টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এছাড়া দেশে টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরে বিভিন্ন দেশ ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
এম আবদুল লতিফের আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি চিকিৎসা সেবা আইন প্রণয়নের কাজ ২০০৮ সালে শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি। পর্যায়ক্রমে এ আইনের সংস্কার কার্যক্রম করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন-২০১৯ নামে ওই আইনটি প্রণয়নের কার্যক্রম মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
একই প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক জানান, বেসরকারি খাতে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মূল্য নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অক্সিজেন ব্যবহারের মূল্য এবং এক্স-রে ও সিটিস্ক্যানসহ ১০টি জরুরি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্য সহনশীল মাত্রায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় আরও দুটি পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন হলে অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্যও নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।
‘নিবন্ধিতরাই ফাইজারের টিকা পাবেন’ : স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া ফাইজার-বায়াএনটেকের টিকা বিশেষ কোনো ব্যক্তিকে দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে যারা নিবন্ধন করেছেন এবং টিকা পাননি, কেন্দ্রের তালিকা অনুযায়ী তারাই এ টিকা পাবেন। রাজধানীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফেজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনস-বিসিপিএস মিলনায়তনে সোমবার বিকালে জাতীয় ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন-২০২১ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ফাইজার টিকার ডায়ালুট আজ আসতে পারে। এটি হাতে পাওয়ার পর এই টিকা প্রদান সংক্রান্ত সব বিষয় নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত সারা দেশে ২ কোটি ২২ লাখ শিশুকে ভিটামিন ‘এ প্লাস’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। ৬ থেকে ১১ মাস বয়সি সব শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সি শিশুকে একটি লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব এমএ আজিজ প্রমুখ। বক্তব্য প্রদান শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশব্যাপী ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।