খবর৭১ঃ চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে আবার সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে গত সোমবার (২৯ মার্চ) দুই সপ্তাহের জন্য ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে সরকার। এর মধ্যে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গণপরিবহনে বর্তমানে যে যাত্রী চলাচল করছে, তার অর্ধেকের বেশি পরিবহন করা যাবে না। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার অর্ধেকের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহনে চলতে হবে। সংক্রমণের উচ্চঝুঁকির এলাকায় আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে, প্রয়োজনে বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে।
বুধবার থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর শুরু হয়েছে। রাজধানীতে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বাসই এক সিট খালি রেখে যাত্রী পরিবহন করছে। তবে কিছু সংখ্যক বাসকে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করতেও দেখা গেছে। গণপরিবহনের অনেক চালক ও কন্ডাক্টরকে দেখা গেছে মাস্ক থুঁতনিতে রেখতে। যাত্রীদের মধ্যেও অনেকে থুঁতনির মধ্যে মাস্ক রাখতে দেখা গেছে।
সরকারের জারি করা ১৮ দফায় মাস্ক পরার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকেই সেটি মানছেন না।
এদিকে করোনার মধ্যে যখন মানুষের আয় সীমিত হয়ে গেছে, এরমধ্যে এখন গণপরিবহনে আবার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। গাড়ি ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার, আমাদের বেতন কি বাড়বে?- এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন চাকরিজীবীরা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে মিরপুর যাওয়া এক বৃদ্ধ পথে দুপুরে মুগদা দাঁড়িয়েছিলেন কয়েক ঘণ্টা। তার উদ্দেশ্য ছিল রাইদা পরিবহনে উঠবেন। কিন্তু যেসব রাইদা তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, সবকটি গেইট বন্ধ। উপায় না পেয়ে কয়েকজন মিলে একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে রামপুরা ব্রিজে আসেন। পরে সেখান থেকে মিরপুরগামী একটি বাসে উঠেন তিনি। তখন তাকে চরম ক্ষোভ আর বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তার মতো আরও বহু যাত্রীকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এভাবে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে অর্ধেক যাত্রী বহনের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী আর খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম বিরম্বনা ও সীমাহীন দুর্ভোগে। বুধবার সকাল থেকেই ঠিক সময়ে অফিসে কিংবা কাজে যেতে পারেননি এসব মানুষ। কারণ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, অধিকাংশ গণপরিবহনই অর্ধেক যাত্রী বহন করেছে। ফলে অধিকাংশ বাস স্টপেজে যাত্রীরা উঠতে পারেননি। বাসের দরজাই খোলা হয়নি।
এতদিন গণপরিবহনের ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি যাত্রী বহন করা হতো। দাঁড়িয়েও গন্তব্যে যেতেন অনেকে। সরকারের নতুন নির্দেশনায় যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। তার ওপর দ্বিগুণ ভাড়াও দিতে হচ্ছে।
অন্যদিকে মহামারি করোনা বেড়ে যাওয়ায় রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বুধবার এক অফিস আদেশে আগামী দুই সপ্তাহের জন্য এই নির্দেশনা দিয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত (আপাতত দুই সপ্তাহ) রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
নৌযানেও ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ও নৌযান মালিকদের মধ্যে বুধবার এ বিষয়ে বৈঠক হয়। ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছরের ৮ মার্চ। এর ১০ দিন পর প্রথম মৃত্যু হয়। সম্প্রতি করোনায় সংক্রমণ বেড়েছে। মৃত্যুও বেড়েছে। গত বছরও দেশে করোনার প্রথম ঢেউ ঠেকাতে গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন ও ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। সে সময়ও ভোগান্তিতে পড়েছিলেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি লঞ্চ, ট্রেনেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।