কোম্পানীগঞ্জে সংঘর্ষ: সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বাদল কারাগারে

0
320

খবর৭১ঃ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ ও সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় মুছাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও মেয়র মির্জা কাদেরের সমর্থক ইকবাল চৌধুরীসহ আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত আ.লীগ নেতা মিজানুর রহমান বাদলকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১নং আমলি আদলতে হাজির করা হয়। পরে আদালতের বিচারক সোয়েব উদ্দিন খান শুনানি শেষে বাদলকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গত মঙ্গলবার আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার বিকালে নোয়াখালী প্রেসক্লাব এলাকা থেকে আ.লীগ নেতা মিজানুর রহমান বাদল গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর রাতে বসুরহাট পৌরভবনের চারপাশে অবস্থায় নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মেয়র আবদুল কাদের মির্জা পৌরভবনের ভেতরেই ছিলেন তখন। ভবনটি নজরধারীতে রাখেন গোয়েন্দা সংস্থ্যার সদস্যরা। রাতভর ব্যাপক উত্তেজনার পর শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌর ভবন থেকে কয়েকজন পৌর কর্মচারীসহ বের আসেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। কর্মচারীদের নিয়ে বসুরহাট বাজার ঘুরে পুনরায় দুপুরে পৌরভবনের তৃতীয় তলায় নিজের কক্ষে যান মির্জা। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে আবারও বের হয়ে আসেন আবদুল কাদের মির্জা। এসময় তিনি তার কয়েকজন সমর্থকদের নিয়ে বাজারের বিভিন্ন অলিগলিতে ঘুরে শো-ডাউন করেন। এ খবর লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৬টা) তিনি পৌর ভবনের ভেতরে অবস্থান করছিলেন। পৌর ভবনের বটতলা দিনভর কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

থানায় মামলা না নেয়ায় আদালতে যাবেন নিহতের ভাই

এদিকে ওই সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সিএনজি অটোরিকশাচালক আলাউদ্দিন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে কাদের মির্জাসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে রাতে মামলা করতে গেলে নিহতের ছোট ভাই এমদাদকে ফিরিয়ে দেয় থানাপুলিশ।

এ ব্যাপারে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমার ভায়ের হত্যার ঘটনার এজাহারে আবদুল কাদের মির্জাকে প্রধান আসামি করায় পুলিশ আমার মামলাটি রেকর্ড করেনি। এরমধ্যে পুলিশ এজাহার থেকে কাদের মির্জার নাম বাদ দিতে আমাকে চাপ দেয়। কিন্তু কোনো চাপের কাছে আমি নত হবো না। আমি শনিবার আদালতে গিয়ে সেখানে মামলা করবো।

বাদলের মুক্তি ও কাদের মির্জার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি পরিবারের

শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটায় নিজ বাড়িতে মিজানুর রহমান বাদলের মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, বাদলের মা আরাধনী বেগম, স্ত্রী সেলিনা আক্তার কাকলি, বোন ফাতেমা আক্তার বকুল ও আমেনা বেগম।

বক্তারা বলেন, মিজানুর রহমান বাদল উপজেলার একজন সফল চেয়ারম্যান। চট্টগ্রাম বিভাগে সেরা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আ.লীগ পরিবারের সন্তান। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা সত্যবচনের নামে বাদলসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ কথা বলে আসছেন। তাদের অভিযোগ মির্জার নেতৃত্বে চাপরাশিরহাটে সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির ও বসুরহাট বাজারে তাদের প্রতিবেশী আলাউদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ পুলিশ হত্যাকারী মির্জা ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না নিয়ে উল্টো বাদলকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে আবেদন করছি হত্যার ঘটনা সঠিক তদন্ত করে বাদলকে মুক্তি দিয়ে মির্জার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।

চলছে পুলিশের অভিযান

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি জানান, সংঘর্ষে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার বিকালে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মুছাপুর ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইকবাল চৌধুরীসহ নতুন আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে পৃথক মামলায় ৩৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার ভোরে বসুরহাট রূপালী চত্বর থেকে সাতটি ককটেল ও ২৬টি গাবের লাঠি উদ্ধার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পৌর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। টহলে আছে র‌্যাব সদস্যরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here