স্টাফ রিপোটার,বাগেরহাট: পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় টুরিষ্ট স্পট হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের করমজল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেষ্টের ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র করমজল বণ্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। নারী পুরুষ শিশু ও ছাত্র-ছাত্রী সহ প্রতিদিন শত শত দেশি বিদেশী পর্যটকের ভীড় জমে এখানে। করমজল পর্যটকদের আকর্ষনীয় স্থান হলেও পাণীয় জল সহ বহুমুখী সমস্যার কারনে নাখোশ পর্যটকরা। সুন্দরবন ভ্রমন ও প্রাথমিক ধারনা নিতে পূর্ব সুন্দবন বিভাগের অধীনে চাঁদপাই রেঞ্জের একমাত্র টুরিষ্ট স্পট করমজল। এখানে হাত দিয়ে হরিণ ছোঁয়া যায়,খাবার খাওয়ানো যায়। হাতে বাদাম, কলা নিয়ে উম্মুক্ত বানরকে ডাক দিলে চলে আসে। হাত থেকে নিয়ে নেয় বাদাম, কলা। যারা স্বচক্ষে কুমির দেখেনি তাদের জন্য করমজল উপযুক্ত স্থান। রৌদ্দজ¦ল ডাঙ্গায় কিংবা জলে ভাসমান বিশাল আকারের কুমির দেখলে শিহরণ জাগে মনে। দেড় কিলোমিটারের কাঠের ট্রেইল ঘুরে সুন্দরবনের সুন্দরী ,কাঁকড়া, বাইন গাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দেখতে পাওয়া যায়, ছোঁয়া যায়। মাঙ্কি ট্রেইল হিসেবেও পরিচিত এ আঁকাবাকা কাঠের ট্রেইলে হাঁটার সময় চোঁখে পড়ে গাছে গাছে বানর। দেশে প্রাকৃতিকভাবে কুমির প্রজননের একমাত্র কেন্দ্র এ করমজল। এখানে কচ্ছপেরও প্রজনন হচ্ছে । করমজলের প্রধান আকর্ষন হচ্ছে কুমির,বানর,চিত্রা হরিণ, কচ্ছপ , কাঠের ট্রেইল, ওয়াচ টাওয়ার। সুন্দরবনের গাছ গাছালি, বণ্যপ্রাণী স্বচক্ষে দেখা ও ছোঁয়ার আকুলতা নিয়ে প্রতিদিন শত শত পর্যটক করমজলে আসলেও তাদেরকে নানা প্রতিকূলতা ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পশুরনদীর তীরবর্তী এ পর্যটন কেন্দ্রে যেতে পার হতে হয় এ নদী। পর্যটকদের ঝুঁকি নিয়ে পাড় হতে হয় এ নদী। ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ও নৌকায় এ নদী পাড় হতে হয়। সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘন্টা। তাছাড়া রয়েছে যাতায়াত ব্যবস্থার পর্যাপ্ততা। নৌযানের অভাবে পর্যটকদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে পাড় হতে হয় নদী। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য। সুন্দরবনের করমজলে পর্যটকদের জন্য প্রধান সমস্যা পাণীয় জল ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা। বিশ্রাম নেয়ার জন্য তেমন কোন বসার জায়গা নেই। ভ্রাম্যমান কিছু দোকান থাকলেও দাম দ্বিগুন। কাঠের ট্রেইলটি এখন নড়বড়ে অবস্থা। পর্যটকদের পদচারনায় যে কোন মূহুর্তে ভেঙ্গে পড়তে পারে। দেড় কিলোমিটারের কাঠের ট্রেইলে পর্যটকদের নিজ নিরাপত্তায় চলতে হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় উম্মুক্ত বানররা প্রায়ই চড়াও হয় পর্যটকদের উপর। সর্তকতা সাইনবোর্ড থাকলেও অনেক অতি উৎসাহী পর্যটকরা ঝুঁকি নিয়ে ঝুকে পড়ে বনের ভিতরে।
করমজলে ঘুরতে আসা পর্যটক কুষ্টিয়ার আল আমিন বলেন, প্রাকৃতিক লিলাভুমি সুন্দরবনের করমজলে বাঘের দেখা না পেলেও এখানে কুমির, বানর ,হরিণ দেখতে পেয়েছি। এখানে পর্যকটদের মানসম্মত কোন ব্যবস্থা নেই। নেই খাবারের ব্যবস্থা। যে খাবার পর্যটকরা নিয়ে আসে তা নষ্ট হয়ে যায়। নেই পাণীয় জলের ব্যবস্থা।
বনভোজন ও করমজলে এসে মোরেলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জামাল শরীফ জানান, যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে ওয়ার্ড হেরিটেজ সুন্দরবনে বিশ^ পর্যটকদের আকর্ষন করা সম্ভব হচ্ছেনা। যোগাযোগ ব্যবস্থা অপ্রতুল। কাঠের ট্রেইলটি জরাজীর্ণ। যে কোনে সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। খাবারের ব্যবস্থা নেই, হোটেল নেই, মোটেল নেই, সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই, বসার ব্যবস্থা নেই।
করমজল ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, পর্যটকদের বসার জন্য ৫টি গোলঘর ও কয়েকটি বেঞ্জ রয়েছে। পাণীয় জলের ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুৎ না থাকার কারনে এসব সমস্যা সৃষ্ঠি হচ্ছে। বাহির থেকে আমাদের পানি নিয়ে আসতে হয়। সমস্যার বিষয়গুলো উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।