খবর৭১ঃ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে সারা দেশে পরিচিতি পেয়েছেন রাজশাহীর একমাত্র নারী পত্রিকা বিক্রেতা দিল আফরোজ খুকি। সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেরই সহায়তা পেয়েছেন। এবার তিনি পেলেন রাজশাহী জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার।
বুধবার খুকিসহ ১০ জনকে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। দেয়া হয় সংবর্ধনা। বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রাজশাহী মহানগরীর সপুরায় মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের হলরুমে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদফতর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আলোচনা সভা শেষে শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল। বিশেষ অতিথি ছিলেন- সমাজসেবী শাহিন আক্তার রেনী, অধ্যাপক ড. তানজিমা জোহরা হাবিব ও মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক শবনম শিরিন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শরিফুল হক এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
দিল আফরোজ খুকি। রাজশাহী মহানগরীর একমাত্র নারী সংবাদপত্র বিক্রেতা। বয়স প্রায় ৬০ বছরের কাছাকাছি। দিনভর পরিশ্রম করলেও অনেক কষ্টে জীবনযাপন করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় খুকির জীবন-সংগ্রামের একটি ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর তার পাশে দাঁড়িয়েছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ১১ বছর পূর্বের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এ ভিডিওটি প্রকাশের পর দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীতে গত ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন খুকি। ঘুম থেকে সকাল ৬টায় ওঠেই তিনি পত্রিকার এজেন্ট ও স্থানীয় পত্রিকার সার্কুলেশন ম্যানেজারদের কাছে যান। এরপর তাদের কাছ থেকে পত্রিকা নেন। পত্রিকা নিয়ে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় হেঁটে বিক্রি শুরু করেন। শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম।
খুকি বলেন, আমার বাবা ছিলেন রাজশাহী জেলা আনসার অ্যাডজুট্যান্ট। আর মা ছিলেন সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষিকা। অল্প বয়সে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সবাই আমাকে ঠকিয়েছে। কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। আর অল্পবয়সে স্বামী মারা যাওয়ায় বিধবা হয়েছি। সংসার না থাকায় একাই সংগ্রাম শুরু করেছি। বেঁচে থাকার এ সংগ্রাম এখনও চলছে।
তিনি বলেন, খবরের কাগজ বিক্রি করে প্রতিদিন ৩০০ টাকা আয় করি। নিজের জন্য ব্যয় করি ৪০ টাকা। আর হজে যাওয়ার জন্য ১০০ টাকা ব্যাংকে জমা করি। বাকি ১৬০ টাকার মধ্যে ১০০ টাকা এতিমখানায়, ৫০ টাকা মসজিদ-মন্দিরে এবং ১০ টাকা ফকির মিসকিনের মাঝে বিতরণ করি। এত দিনে ব্যাংকে জমা হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। সেই জমানো অর্থ আর পৈতৃকভাবে পাওয়া কিছু সম্পত্তিই আমার জীবনের শেষ সম্বল। পৈতৃকভাবে পাওয়া জমিটি কোনো স্কুলের নামে দান করতে চাই। সেই দানের টাকা থেকে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে বৃত্তি। আর আমার মৃত্যুর পর চিরনিদ্রায় শায়িত হতে চাই জন্ম শহর কুষ্টিয়ায়।