খবর৭১ঃ গ্রামীণফোনের গ্রাহকদের তথ্য চুরি করে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ফেলা হতো প্রেমের ফাঁদে। এরপর নানা অন্তরঙ্গ কথাবার্তা রেকর্ড করে তা প্রকাশের হুমকি দিয়ে দাবি করতো মোটা অংকের টাকা। এভাবে প্রতিষ্ঠিত অনেক ব্যবসায়ী বিশিষ্টজনদের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন পারভীন আক্তার নুপুর।
পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর এ চক্রের প্রতারণা বাণিজ্যের নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। তাদের প্রতারণার শিকার তেমনই একজন আব্দুস সালাম (ছদ্মনাম)। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বার্হী পরিচালক তিনি। বছর দেড়েক আগে পারভীন আক্তার নুপুর নামে এক নারী তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল করে তার কাছে চাকরি চান। পরে ওই নারী তার অফিসে গিয়ে দেখা করেও চাকরির আবদার করেন।
ওই ব্যক্তি নুপুরকে জানান, প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। সেই নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করুন। তারপর আমি দেখবো কী করা যায়। কিন্তু পরে এই নারী কোনো আবেদন করেননি। তবে মাঝে-মধ্যে ফোনে নিজের অভাবের কথা জানাতেন। চাইতেন টাকা-পয়সা। আব্দুস সালাম তাকে কোনো ধরনের সহায়তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এবার ভোল পাল্টে ফেলেন নুপুর। নুপুর তাকে বলেন, ‘আপনি এতো দিন আমার সঙ্গে প্রেম করেছেন, প্রেমের দাম দেবেন না! দাবি করে বসেন, ৫ লাখ টাকা। টাকা না দিলে পরিবার, বন্ধু ও অফিসের সহকর্মীদের গোপন প্রেমের জানিয়ে দেয়ার হুমকি দেন নুপুর। লোক-লজ্জার ভয়ে বাধ্য অল্প কিছু টাকাও দেন তিনি।
রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় একটি প্রতারণার মামলা সূত্র ধরে পুলিশের তদন্তে নুপুরের অসংখ্য প্রতারণার কাহিনী বেরিয়ে আসে। পুলিশ খোঁজ পায় একটি চক্রের। যাদের টার্গেট সমাজের ধনাঢ্য , শিল্পপতি ও বড় বড় ব্যবসায়ী।
পরে এ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদের একজন শামসুদ্দোহা খান বাবু। যিনি একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করেন। কাজের সুবাদে ধনাঢ্য, শিল্পপতি ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে চক্রের প্রধান নুপুরকে দিতেন। এরপর নুপুর সমাজকর্মী বা চাকরিপ্রার্থী হিসেবে সরাসরি বা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতেন। সেইসব কথোপকথন রেকর্ড করে রাখতেন। যেখানে তারা ব্যক্তিগত কথাগুলো সংগ্রহে রাখতেন। পরে সেগুলো দিয়ে করতেন ব্ল্যাকমেইলিং।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার চক্রের আরেক সদস্য রুবেল মাহমুদ অনিক। তিনি কাজ করতেন গ্রামীণফোনের কাস্টমার সার্ভিস সেন্টারে। টাকার বিনিময়ে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির সিমের ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করতেন। ছয় জন গ্রাহকের তথ্যের বিনিময়ে ১০ হাজার টাকা নিতেন অনিক। অনিকের দেয়া তথ্যের সূত্রধরে শুরু হয় প্রতারণা। টাকা না দিতে চাইলে প্রতারণার শেষ ধাপে হাজির হতেন নুপুরের বড় বোন শেফালী বেগম। টাকা না দিতে চাইলে বোনের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ নারী নির্যাতন মামলার ভয় দেখাতেন। সম্মানের ভয়ে টাকা দিতে বাধ্য হতেন অনেকেই।
উল্লেখযোগ্য কোনো আয় না থাকলেও রাজধানীর গুলশানে ৮০ হাজার টাকা ভাড়ার ফ্লাটে থাকতেন নুপুর। এমনকি নিজের শরীর চর্চায় ব্যয় করতেন মাসে ৩০ হাজার টাকা। ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী জানান, নুপুরের আচারণ ভালো না। তার ফ্লাটে বিভিন্ন লোকজন আসা যাওয়া করতো।
নুপুরের এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের পর তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ জানান, এই চক্রটিতে ৬ থেকে ৬ জন সদস্য কাজ করে। চক্রের সদস্যরা আবার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তারা টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতেন।