খবর৭১ঃ কক্সবাজারে একের পর এক মারা যাচ্ছে বন্য হাতি। গত দুই বছরে ১৩ হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। শুধু চলতি মাসেই কক্সবাজার জেলায় ৩টি হাতি মারা গেছে। আবাসস্থল ধ্বংস, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, রোহিঙ্গা ও অভয়ারণ্য ধ্বংসের কারণে এ অবস্থা হয়েছে বলে দাবি পরিবেশবাদীদের।
এ নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে হাতির আবাসস্থল উজাড়, চলাচলের করিডোর চরমভাবে বাধাগ্রস্ত ও খাদ্য সংকটে পড়েছে হাতি। প্রায় লোকালয়ে হানা দেয় বন্য হাতির দল। এ কারণে ফসল রক্ষায় বৈদ্যুতিক শক ও গুলি করে হাতি হত্যা করা হচ্ছে।
সারা দেশের মহাবিপন্ন এশিয়ান হাতির ২৬৮টির দুই–তৃতীয়াংশের বাস কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। ৬ নভেম্বর চকরিয়ার খুটাখালী বনাঞ্চলে একটি বাচ্চা হাতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৬ নভেম্বর রামুর জোয়ারিয়ানালা বনাঞ্চলে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩০ বছর বয়সী স্ত্রী হাতি মারা যায়। আর ১৭ নভেম্বর রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়িতে বৈদ্যুতিক শক ও গুলি করে আরও একটি হাতিকে হত্যা করা হয়।
কক্সবাজারে একের পর এক এশিয়ান হাতির মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতা ইব্রাহিম খলিল মামুন। তিনি বলেন, নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি, খাদ্য সংকট দূর করা, হাতি চলাচলের করিডোর নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখা, হাতি হত্যায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা, মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, বনভ‚মি দখল রোধ, বনাঞ্চল তৈরিসহ মহাবিপন্ন এশিয়ান হাতি সুরক্ষায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না–হলে মানুষের নির্মমতায় দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে পড়বে বন্য হাতি।
কক্সবাজার পরিবেশবাদী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, কক্সবাজারে একের পর এক বন্য হাতি গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। হাতি ও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে এ অবস্থা হয়েছে। কক্সবাজার অঞ্চলে যেসব বন্য হাতি রয়েছে, তারা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বন্দি হয়ে আছে। হাতির আবাসস্থল দিয়ে অপরিকল্পিত রেললাইন ও রোহিঙ্গা বসতি গড়ে ওঠায় এ পর্যন্ত ২২টি হাতির করিডোর বন্ধ হয়েছে। এতে হাতিগুলো লোকালয়ে হানা দিচ্ছে ও এক শ্রেণির দুষ্কৃতকারী হাতিগুলোকে গুলি করে হত্যা করছে। হাতিগুলোকে বাঁচাতে গেলে সরকারকে সঠিক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের উপ–পরিচালক নাজমুল হুদা বলেন, কক্সবাজারে বিভিন্ন এলাকায় হাতিসহ বন্যপ্রাণী হত্যার বিষয়টি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পাহাড় কাটাসহ বিভিন্ন মানবসৃষ্ট কারণে এসব হাতি ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে। পাহাড় কাটা রোধসহ বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম বা আবাসস্থল রক্ষায় পরিবেশ অধিদফতর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কক্সবাজার দক্ষিণ ও উত্তর বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার বন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি মাসে তিনটি বন্য হাতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে দেখা গেছে, প্রতিটি হাতিকে ৪–৮টি পর্যন্ত গুলি করা হয়েছে। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক শকের চিহ্নও রয়েছে। ফলে মানুষের এমন নির্মমতায় এশিয়ান হাতি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।