খবর৭১ঃ তারকার স্খলন হয়েছে, পতন হয়নি। পতন ঠেকিয়েছে ভক্তকুল। স্খলনজনিত সাময়িক স্থিতিজড়তা কাটিয়ে তারকার পুনঃঅধিষ্ঠানও রূপকথার মত। অথচ কোথাকার কোন অর্বাচীনের হুমকিতে তারকার অসহায় আত্মসমর্পন। সামনে হয়তো খেলার মাঠে ব্যাট হাতে ছুটন্ত তারকার সাথে ছুটবেন অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষীও। কয়েকদিন আগে জাতির পিতার ‘মূর্তি’ অপসারণের হুমকিতে যতটা আলোড়িত হয়েছিলাম, এবারে অন্তরে আলোড়নের তীব্রতা তার চেয়ে অনেক কম। হয়তো এটাই ‘নিউ নরমাল’।
হতাশ হয়েছি, স্তম্ভিত হয়েছি, আর তারপর এক সময় বিলুপ্তপ্রায় বোধশক্তি নিয়ে গতানুগতিক জীবনের গড্ডালিকা প্রবাহে পাল তুলেছি। ক্রমেই যেন আশপাশের আর দশজনের মতই সব কিছুই গা সওয়া করে নেওয়ার সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পরছি।
প্রতিবাদ হয়েছে সামান্যই। প্রতিবাদ করেছেন মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত এ বিবেকবান মানুষটির প্রয়াত পিতার সাথে, চট্টগ্রামে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে আমার প্রয়াত পিতা প্রকৌশলী মাহতাব উদ্দিন আহমেদের ঘনিষ্টতা ছিল পারিবারিক। তার সাথে আমার পরিচয়টা অবশ্য আরও অনেক পরে, যখন তিনি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে। বড় দলের বড় নেতাসুলভ কোন বড়ত্ব তার মধ্যে তখন দেখিনি, যেমন এখনও দেখিনা মন্ত্রিসভার সদস্য হবার পরও। অথচ কত বড় কাজটাই না তিনি করলেন! তবে তার ঘাড়টা পাল্টা মটকে দেয়ার হুমকির তেমন কোনও প্রতিবাদ আমার চোখে পড়েনি। মূর্তি সংক্রান্ত উদ্ধত উক্তির প্রতিবাদও হয়েছে সামান্যই, অন্তত আমার চোখে তেমনটাই ধরা পড়েছে।
প্রতিবাদে সরব হয়েছে ঢাকার রাজপথ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের তাৎক্ষণিক মিছিলে। প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’- এর ভার্চুয়াল ‘সম্প্রীতি সংলাপ’-এ দেশবরেণ্য বুুদ্ধিজীবীরা। আর পত্রিকায় এসেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ। আমি নিশ্চিত প্রতিবাদ করেছেন আরও অনেকেই। হয়তো সেগুলো আমার চোখ এড়িয়ে গেছে। যে উদাহরণগুলো টানলাম সেগুলো চোখে পরার কারন
এই প্রতিবাদীদের সাথে আমার কোন না কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা। স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কাছাকাছি সময়ে থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। কাজেই তাদের সবগুলো ভালো কাজই না চাইলেও কেন যেন আমার চোখে পড়ে যায়। আর সম্প্রীতি বাংলাদেশ আর একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাথে তো আমি সরাসরিই যুক্ত। কাউকে খাটো না করেই বলতে চাই এসব প্রতিবাদ যৎসামান্যর চেয়েও অনেক কম।
যার স্বপ্নে ছিল বাংলাদেশ, বাংলাদেশটি যার একক কৃতিত্বে বাস্তবতা, তার জন্ম শতবর্ষে সেই স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানীতে এমন ধৃষ্টতার প্রতিবাদে, প্রতিবাদের সুনামী ওঠা প্রত্যাশিত ছিল। কার্যতঃ তা চোখে পড়েনি।
সে প্রেক্ষাপটে গড্ডালিকার প্রবাহে ভাসমান যখন আমার ভেলা, সংবিধানের অসম্প্রদায়িকতার চেতনা যখন অবাক বিস্ময়ে ফ্যাল–ফ্যাল করে তাকিয়ে আর ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ – প্রধানমন্ত্রীর এ বাক্যের বিপরীতে যখন তারকার ফেইসবুক লাইভ, ঠিক তখনই একজন সমবয়স্ক ব্যক্তির উক্তিতে ফিরে পেয়েছি আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা। অনুপ্রেরণা ফিরে পেয়েছেন একাত্তর আর অসাম্প্রদায়িকতার চেতনাকে লালন করেন আর ধারণ করেন এদেশের এমনি কোটি নাগরিক। দেশের যুবকদের প্রতিনিধিত্বশীল অন্যতম বৃহৎ প্ল্যাটফর্ম, ‘ইয়াং বাংলা’-র আয়োজনে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়ার ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে তা সরাসরি দেখার সুযোগ আরও অনেকের মতই হয়েছে আমারও।
অনেকগুলো ভালো–ভালো কথা বলেছেন জয়। স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমরা যে ধর্মেরই হই না কেন, আমরা সবাই বাঙালি’। বলেছেন, ‘বাংলাদেশ তার প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে সরে যেতে পারে না’। বুকটা গর্বে এত বড় হয়ে গেছে যে একেবারে ফাটি–ফাটি। জয় এর নানা যে আদর্শ ধারণ করতেন, তার মা–র প্রতিটি কাজে যে আদর্শের অনুরণন, তার মুখে সেই একই ঘোষণা আমাদের উদ্দীপ্ত– অনুপ্রানিত করে, সাহস জোগায় এ আদর্শে অটল থাকায়। তার এই ঘোষণা যে আমাদের জন্য কত বেশি অনুপ্রেরণাদায়ী তা হয়তো তার কখনো জানা হয়ে উঠবে না, তবে তার জন্য থাকলো আমাদের হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা আর অনেক অনেক শুভকামনা।