খবর৭১ঃ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শীতের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। বাড়ছে করোনার প্রকোপও। শীতে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে প্রায় সব বয়সের মানুষই সিজন্যাল ফ্লুসহ ঠাণ্ডা-জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় শীতের প্রভাবে করোনা আক্রান্তের তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও।
সম্প্রতি শীতের প্রকোপে করোনায় আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ইউনিসেফ জানিয়েছে, বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত প্রতি ৯ জনের মধ্যেই একজন শিশু। বিশ্বের ৮৭টি দেশে করোনায় আক্রান্ত দুই কোটি ৫৭ লাখ মানুষের মধ্যে ১১ শতাংশই শিশু-কিশোর এমনটা জানানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে। করোনার সংক্রমণের প্রভাব সম্পর্কে কঠোরভাবে সতর্ক করে শিশুদের করোনা ভাইরাস থেকে দূরে রাখার জন্য এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি।
অন্যদিকে ঢাকা শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি হাসপাতালের বহির্বিভাগে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৮৩৩ জন শিশুর। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় ১৭০ জন শিশু। আবার শুক্রবার (২০ নভেম্বর) করোনা শনাক্ত হয় আরও ১০ জন।
সূত্রটি আরও জানায়, হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৪টি শিশু। এই ১৪ জনের মধ্যে চারজন করোনার ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে। তবে বাকি ১০ জন করোনা আক্রান্ত হলেও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ও রোগের কারণে মৃত্যু হয়েছে।
গত ২১ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ক প্রেস রিলিজে জানানো হয়, একদিনের শিশু থেকে ১০ বছরের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ১১ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। শতকরা হিসাবে যা শূন্য দশমিক ৪৭ ও শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ।
ঢাকা শিশু হাসপাতালে অধ্যয়নরত (এমডি কোর্স- শিশু মেডিসিন) ডা. তপন কুমার রায় বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে প্যানডেমিক ঘোষণা করেছে। এই ভাইরাস যে কেউ যে কোনো মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারেন। ১০ বছর কম শিশুদের আক্রান্তের সম্ভাবনা কম থাকে। তবে যেসব শিশুদের ইমিউনিটি কম থাকে তারা এবং যেসব শিশু দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগতে থাকে (যেমন- জন্মগত হার্ট ডিজিস, কিডনি সমস্যা, হাঁপানি) তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অপরদিকে এক বছরের কম বয়সের শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা, প্রাকৃতিক ভাবেই তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
এই ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি ছড়ায় রিসপিরেটরি ড্রপলেটে ইনফেকশনের (হাঁচি, কাশি, সর্দি) মাধ্যমে। অনেক ক্ষেত্রে নবজাতকরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তারা ক্লোজ কন্ট্রাক্ট অর্থাৎ শিশুর কাছে যারা থাকছেন যেমন- পরিবারের আক্রান্ত কেউ অথবা হাসপাতালের নার্স বা আক্রান্ত কারো মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে।
গর্ভাবস্থায় আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকে এ রোগ ছড়ায় কি না এটা নিয়ে এখনও স্টাডি চলছে। প্রেগনেন্সির শেষ তিন মাসে মা যদি আক্রান্ত হন তবে প্লাসেন্টার মাধ্যমে শিশুর ভার্টিকাল ট্রান্সমিশন হতে পারে। এটা নিয়ে এখনও স্টাডি চলছে। এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে শিশু জন্মগত ভাবে করোনায় আক্রান্ত হয় কি না।
রিসপিরেটরি ড্রপলেটে ইনফেকশনের মতো আক্রান্ত বস্তু থেকেও করোনা ছড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বনের বিকল্প নেই। করোনা থেকে সুরক্ষায় শিশুদেরও বড়োদের মতো সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে এবং শিশুর পরিচর্যকারীদের সর্তক থাকতে হবে।