‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’

0
533
মুজিব প্রটোকলঃ জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকীতে লিভার বিশেষজ্ঞদের শ্রদ্ধার্ঘ্য
লেখকঃ অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও অর্থ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

খবর৭১ঃ করোনার সাথে আমাদের বসবাস আর ক’দিনের, সে নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। তবে করোনা যে সহসা বিদায় হচ্ছে না, এটি এখন মোটামুটি সবার জানা হয়ে গেছে। কোভিডের এই দোলাচালে মানুষের মধ্যে নানান ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একদল আছেন যারা ধরেই নিয়েছেন কোভিড নিয়ে ভেবে লাভ নেই।

কোভিড থাকতে এসছে, যেতে নয়। কোভিডের সাথেই যেহেতু আমাদের বসবাস, তাই তারা নিজেদের শপে দিয়েছেন নিয়তির হাতে। চলছেন, ফিরছেন, কাজ-কাম করছেন। সাথে মাস্ক একটা রাখছেন বটে, তবে সেটি বেশির ভাগ সময় থাকছে পকেটে, মুখে নয়। নেহায়েত বাধ্য না হলে ওটা পকেটেই থাকে। আর যদিও বা পরিস্থিতির কারণে কখনও কখনও মুখে তার জায়গা হয়, প্রথম সুযোগেই আঙ্গুলের আলতো ছোঁয়ায় তা সুরুত করে চলে যায় থুতনির নিচে। কোভিডে বিশ্বাসী আরেকটি সম্প্রদায় আছেন। সংখ্যায় তারা যথেষ্টই ভারী। তারাও বিশ্বাস করেন কোভিড থাকতে এসেছে, যেতে নয়। তবে তারা নিয়তির উপরে অতটা নির্ভরশীল নন। তারা সারাক্ষণ নাকে-মুখে মাস্ক জড়িয়ে রাখেন। তাদের কেউ কেউ আরও বেশি সিরিয়াস।

বাইরের খাবার তো খান-ই না, পানিও ছুঁয়ে দেখেন না। পাছে মাস্ক খুলতে হয়! কারও কারও পকেটে থাকে মিনি হ্যান্ড সেনিটাইজার। তারা সারাক্ষণই হাতে তো বটেই, আশেপাশে, চেয়ার-টেবিলে সবখানে ঐ জিনিসটি ছিটাতে থাকেন। আর তৃতীয় এক শ্রেণির মানুষ আছেন, যারা বিশ্বাস করেন কোভিড বলতে আসলে কিছুই নেই, এসবই মিডিয়ার সৃষ্টি। আর তাদের যদি কেউ কেউ বিশ্বাস করেও থাকেন যে কোভিড এক সময় ছিল, এখন তারা মনে করেন কোভিড এদেশে আর নেই, চলে গেছে প্রতিবেশি দেশে। কোভিড নিয়ে তাই তাদের শংকার জায়গাটা তাই খুবই সামান্য।

‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’

এই যে এতো সব মুনি আর তাদের এতো সব মত- এই সব মানুষগুলোকে নিয়েই আমাদের সমাজ। তাদেরকে নিয়েই আমাদের চলতে হবে এবং একসাথে একদিন আমাদের করোনাকাল থেকে মুক্তি পেতে হবে। তাদের নিয়েই আমাদের ‘নিউ নরমাল’ আর তাদের সাথে নিয়েই আমাদের ফিরতে হবে আমাদের ‘ওল্ড নরমালে’। এই যে বাস্তবতা, এর প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়েই আমরা মুক্তির পথটা খুঁজছি। প্রথমে আমাদের আস্থা ছিল লক ডাউনে। আমরা বিশ্বাস করছিলাম দু’তিনটি মাস লক ডাউনের পর ঘর থেকে বের হয়ে দেখবো কোভিড বিদায় হয়েছে। কার্যত তা হয়নি। কোভিড সংক্রমণের হার আর ঝুঁকি বিবেচনায় লোকালয়গুলোকে রেড, ইয়েলো আর গ্রিন জোনে ভাগ করে কোভিড ঠেকানোর পরামর্শ ছিল অনেকের। ভাগ্যিস সে পথে আমরা হাঁটিনি। এক লক ডাউনের বিল মেটাতে সরকারের খরচ হয়েছে লক্ষ কোটি টাকা। জোনিংয়ের বিল কতো আসতো কে জানে?

ইদানিং আমাদের সব প্রস্তুতি ভ্যাক্সিনকে ঘিরে। লক্ষ কোটি না হলেও হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়ে গেছে ভ্যাক্সিন কেনার জন্য। সিদ্ধান্ত হয়েছে যখন যে দেশেই ভ্যাক্সিনই আসুক না কেন, দেশের মানুষকে তা দেয়া হবে বিনামূল্যে। সরকারি পর্যায়ে দেন-দরবার চলছে আগে-ভাগে ভ্যাক্সিন নিয়ে আসার জন্য। আজকের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান, সেখান থেকে আমরা অন্তত এটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, ভ্যাক্সিন দৌড়ে এগিয়ে থাকা প্রতিটি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন কিংবা ভারত- তারা তাদের ভ্যাক্সিন আমাদেরকে দিবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই। এ ব্যাপারে এসব দেশ থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এরই মধ্যে প্রতিশ্রুতিও পাওয়া গেছে। আশা করা যাচ্ছে ইউকে কিংবা রাশিয়ার ভ্যাক্সিন কিংবা অন্য কোন দেশে ভ্যাক্সিন বাজারে এলে, তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে থাকবো না। তবে বাস্তবতা হচ্ছে ভ্যাক্সিনও কিন্তু মুক্তি নেই। ভ্যাক্সিন হচ্ছে অনেকটা লক ডাউনের মতই। পার্থক্যটা শুধু এই যে লক ডাউনের সময় আমাদের ঘরে বসে কেটেছে অলস সময়। ভ্যাক্সিন আসলে তেমনটি হবে না। ভ্যাক্সিন নিয়ে আমরা বুক চিতিয়ে করোনাকালে ঘরের বাইরে ঘোরাঘুরি করতে পারবো, কিন্তু তা বড়জোর কয়েক মাস কিংবা বছরের জন্য। ভ্যাক্সিন নিতে হবে বারবার, অথচ করোনা থেকে যাবে তার জায়গাতেই। সে ছিল এবং থাকবে।

বিশ্ব যখন মাথা কুটে মরছে কোভিড থেকে মুক্তির একটা সহজ সমাধানের খোঁজ, সেই সমাধানটি দিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি ছোট, আপ্ত বাক্যে – ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’। কোভিডের বিরুদ্ধে সবচেয়ে টেকসই আর ধ্বনন্তরী হচ্ছে যে অস্ত্রটি, সেটি এই মাস্ক। আমরা সবাই যদি মাস্ক মুখে ঘোরাঘুরি করি, কোথায় যাবে তখন কোভিড? একটা না একটা সময়েতো তার বিদায়ের ঘন্টাটা বাজবেই। বলাটা অবশ্য সহজ, করাটা খুবই কঠিন। সমাজে যে নানা মতের নানা মুনি, আর সবাইকে নিয়েই তো আমাদের সমাজ। সমাজের বেশিরভাগ লোককে মাস্ক পরানো গেলেওতো হবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জেতা যায় নির্বাচন, জেতা যায় না কোভিড! অনেকে কড়াকড়ি আইন প্রয়োগের কথা বলছেন। মাঠের সাথে যোগাযোগ না থাকলে যা হয় আর কি! কয়জনকে পোড়া যাবে কারাগারে? কোথায় সেই কারাগার? ফাইনই বা করবেন কয়জনকে? আর আইনের যারা প্রয়োগ করবেন, তারাও তো আমাদের সমাজেরই মানুষ। তাদের মধ্যেওতো নানা মুনি, নানা মত।

‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’

এই প্রেক্ষপটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর “নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ উদ্যোগটি ঐতিহাসিক। নেটে অনেক ঘাটাঘাটি করে দেখলাম, রাষ্ট্রীয়ভাবে এই পলিসি গ্রহণ এই প্রথম। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক আর কেনটাকি স্টেট দুটি রেস্টুরেন্টসহ কিছু কিছু জায়গায় এই পলিসি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে মাত্র। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন সরকার এমন উদ্যোগ নিয়েছেন, এর নজির এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। সেই কাজটিই করে দেখালেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার দূরদৃষ্টিতে এক সময়ের ‘তলা বিহীন বাংলাদেশ’ আজ বিশ্বের অনেকের রোল মডেল।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি এবং পরামর্শে আজকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি যেমন করোনাকালে ইর্ষণীয়, তেমনি তার নির্দেশে যদি আমরা প্রত্যেকে মাস্ক পরি আর একে অপরকে মাস্ক পরতে উৎসাহিত করি, আর যারা তারপরও মাস্ক পরবেন না, তাদেরকে যদি সেবাটা না দেই, তা সে সরকারি কিংবা বেসরকারি যে জায়গাতেই হোক না কেন, আপনারা নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবেন যে, একদিন না একদিন সেই সুদিন অবশ্যই আসবে যেদিন কোভিড হবে পরাজিত আর আমরা আমাদের ‘নিউ নরমালকে’ নিয়ে যেতে পারবো ‘ওল্ড নরমালে’।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here