দেহরক্ষীসহ ইরফান সেলিম ৩ দিনের রিমান্ডে

0
326

খবর৭১ঃ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফট্যানেন্ট ওয়াসিফ আহমদকে সস্ত্রীক মারধর করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সাময়িক বরখাস্তকৃত কাউন্সিলর ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদুল ইসলামকে তিন দিন করে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার ( ২৮ অক্টোবর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূরের আদালত এই আদেশ দেন। অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনের পৃথক দুটি করে মোট চারটি মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে রাজধানীর ধানমণ্ডি থানায় দায়ের করা মামলা তদন্তের দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তদন্ত বিভাগে (ডিবি)।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল পৌনে ১০ টায় কারাগার থেকে দুই আসামি ইরফান সেলিম ও জাহিদকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাদের কারাগারের গারদে রাখা হয়। বেলা ১২ টায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূরের আদালত দুই আসামিকে ধানমন্ডি থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখান। তারপর একই আদালতে দুই আসামির রিমান্ড শুনানি হয়। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদের প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (মামলার তদন্ত কর্মকর্তা) আশফাক রাজীব হায়দার আসামি ইরফান সেলিম ও জাহিদকে গ্রেপ্তার দেখানোসহ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির জন্য গতকাল বুধবার দিন ধার্য করেন।

আদালতে শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আসামিরা নিরীহ ব্যক্তিকে কেন এভাবে মারধর করল। আসামিদের রিমান্ডে নিলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিও আছে। তাদের পরিচয় জানতেও দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।

অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে আইনজীবী প্রাণনাথ রিমান্ডের বিরোধিতা করে বলেন, ইরফান যে বাদীকে মেরেছে, এমন কথা এজাহারে বলা নাই। কে না কে মেরেছে সেটা সুনির্দিষ্ট না। তিনি যোগ করেন, বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার বাসায় গেল। সব দেখে তাকে গ্রেপ্তার করল, সাজাও দিল, যা কিছু আছে, যা নাই,তাসহ সাজা হল। মারামারির জন্য রিমান্ডের কী দরকার। প্রমাণ হলে সাজা হবে না হলে খালাস পাবে। এখানে রিমান্ডের কিছু নাই।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক দুই আসামিকে তিন দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এ মামলার আরেক আসামি এবি সিদ্দিক দীপুকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকেও তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছিলেন। আর তার আগের দিন ইরফানের গাড়ির চালক মিজানুর রহমানকে এক দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

চার মামলা তদন্তের নির্দেশ:

ইরফান সেলিম ও তার বডিগার্ড জাহিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক দুটি করে মোট চারটি মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার অস্ত্র আইনে দুটি মামলায় এজাহার আদালতের পৌঁছালে ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী তা গ্রহণ করে আগামী ১৭ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ইরফান ও জাহিদের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলায় ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মামুনুর রশিদের এজাহার গ্রহণ করে আগামী ৩ ডিসেম্বর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। র‌্যাবের দায়ের করা অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলাতেও ইরফান ও জাহিদকে সাত দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদার।

প্রসঙ্গত, নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে সস্ত্রীক মারধরের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর সোমবার দুপুরে চকবাজার দেবীদাস ঘাট লেন এলাকায় সাংসদ হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ছেলে ইরফান সেলিমকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে মদ্যপান ও ওয়াকিটকি রাখায় তাকে এক বছরের সাজা দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার ডিএসসিসি’র কাউন্সিলর পদ থেকে ইরফানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এর আগে ইরফান সেলিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা হয়। নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খান বাদী হয়ে সোমবার ভোরে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলার আসামিরা হলেন- ইরফান সেলিম, তার বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদ, হাজি সেলিমের মদিনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দীপু ও গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাত আরও দুই তিন জন। এই মামলায় এজাহারভুক্ত সব আসামী গ্রেপ্তার হয়েছে। দীপুকে এ মামলায় তিন দিনের রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এদের মধ্যে ইরফান সেলিম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় কারাগারে যাওয়ায় ইতোমধ্যে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here