খবর৭১ঃ বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশ। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (এইচডব্লিউও) স্বীকৃতি ছাড়া কোনো টিকা বাংলাদেশ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
করোনা ভ্যাকসিনের প্রাপ্তির পথপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতেই আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান একটি উপস্থাপনা দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বিনা খরচে পাওয়া যাবে না এটা ধরে নিয়ে টিকার জন্য ৬০০ কোটি টাকা রেখেছে সরকার। দেশে সবাইকে না পারলেও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা ভ্যাকসিনের জন্য বিভিন্ন দেশে উঠেপড়ে লেগেছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে ৪৬টি ভ্যাকসিনের, আর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে ৯১টি ভ্যাকসিনের। যারা টিকা তৈরি করছে, শুরু থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আমাদের একটা বেইজলাইন হলো ডব্লিউএইচও যেটাকে রিকগনাইজ না করবে, সেটাকে আমরা একসেপ্ট করব না।’
সচিব বলেন, ‘এটাকে বেজলাইন ধরে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডিপার্টমেন্টগুলো এবং আমাদের ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানি পার্সোনালি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এখানে প্রোডাকশনের জন্য।’
চীনের বেসরকারি কোম্পানি সিনোভ্যাকের টিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে আইসিডিডিআর,বি আবেদন জানানোর পর তা অনুমোদন করা হয়েছে। এখানে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের একটা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে।’ বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হলে টিকা কম দামে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে বলে জানান তিনি।
রাশিয়ার টিকার বিষয়ে সচিব বলেন, ‘রাশিয়ার ক্যামেলিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টারের এপিডেমিওলজি এবং মাইক্রোবায়োলজি ‘স্পুটনিক’ভ্যাকসিন প্রযুক্তি বাংলাদেশে হস্তান্তরের জন্য অফার দিয়েছে। এটাও বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের পুরো যোগাযোগ আছে। কিন্তু আমরা কন্ডিশন দিয়েছি এটার জন্য ডব্লিউএইচওর অ্যাপ্রুভাল লাগবে।’
ভারতের টিকার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আরেকটি হচ্ছে ভারতের বায়োটেক, সেটা তারা আমাদের এখানে ট্রায়াল করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও ভ্যাকসিন কার্যক্রম এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ৩৬ জনের প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করেছে। অনলাইনে অরিয়েন্টেশন ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।’
টিকা কিনতে বরাদ্দ ৬০০ কোটি টাকা
শুরুতে করোনা ভ্যাকসিন ফ্রিতে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই এমনটা ধরে টিকা কেনার জন্য ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
টিকা কেনার জন্য বাজেটে একটি প্রকল্পের আওতায় ৬০০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অর্থ সচিব আমাদের নিশ্চিত করেছেন, কোনো কারণে যদি ফরেন কারেন্সি নাও পাওয়া যায়, আমাদের বাজেটে সেটার সংস্থান রাখা হয়েছে। ভ্যাকসিন কেনার জন্য টাকা-পয়সার কোনো সমস্যা ইনশাআল্লাহ হবে না।’
সচিব বলেন, ‘জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী যখন ভাষণ দেন, তখন তিনি বলেছিলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরিকারী সকল দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভ্যাকসিন নিতে অর্থ বরাদ্দ করেছি। যেখানে ভ্যাকসিনটি প্রথম পাওয়া যাবে সেখান থেকে সংগ্রহ করা হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন আসার ইমিডিয়েট কোনো সম্ভাবনা নেই, এটা আমাদেরকে বুঝতে হবে। সারা পৃথিবীতে একটা কম্পিটিশন চলছে। বিনা পয়সায় এই ভ্যাকসিন পাওয়ার এখনই কোনো সুযোগ নেই। যদি আসে গ্যাভির মাধ্যমে সেটাও একটু দেরি হবে।’
করোনাভাইরাস টিকা পেলেও তা দেশে সবাই বিনামূল্যে পাচ্ছেন না এমন ইঙ্গিত দিয়ে সচিব বলেন, ‘ভ্যাকসিনের প্রাইসটা তো এখনো ফিক্সড যায়নি। সবকিছু দেখা যাক।’ তবে গরিব মানুষদের বিনামূল্যে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।