খবর৭১ঃ
মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন দ্রুত পেতে সরকারকে অগ্রিম টাকা জমা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এছাড়া করোনার পরীক্ষা বাড়ানো ও আসন্ন দুর্গাপূজা সীমিত পরিসরে উদযাপনের ব্যবস্থা করাসহ সরকারকে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছে কমিটি। খবর ইউএনবি।
কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ১৯তম অনলাইন সভায় এসব পরামর্শ দেয়া হয়।
পৃথিবীর সকল দেশ সবার আগে ভ্যাকসিন পেতে নানা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এমনকি কয়েকটি দেশ এ ভ্যাকসিন কেনার জন্য অগ্রিম টাকা জমা দিয়েছে। এ ছাড়া গ্যাভির ভ্যাকসিন পেতে বেশ দেরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বাংলাদেশেরও অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে ভ্যাকসিন বুকিং করা প্রয়োজন বলে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
একই সঙ্গে কমিটি সরকারকে বলেছে, কোনো একটি ভ্যাকসিনের জন্য কাজ না করে একাধিক উৎসের সাথে যোগাযোগ ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
তাদের মতে, ভ্যাকসিন প্রাপ্তির পর প্রদানের কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করতে হবে এবং এখনই ভ্যাকসিন ডিপ্লয়মেন্ট প্ল্যান চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। ভ্যাকসিন প্রদানের পরবর্তী সময়ে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলোআপ করার ব্যবস্থাও থাকতে হবে বলে কমিটি জানায়।
তারা ভ্যাকসিন বিষয়ক বিশেষ কমিটিতে নাইট্যাগ ও জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রতিনিধি রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
কমিটি জানায়, যে সব প্রতিষ্ঠান ট্রায়াল কার্যক্রমের উপযুক্ত ও দক্ষ তাদের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। আইসিডিডিআরবির সাথে সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আইইডিসিআর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
কোভিড-১৯ পরীক্ষার পরিমাণ বাড়াতে পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি এন্টিজেন ও এন্টিবডি পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় কমিটি।
সভায় জানানো হয়, এন্টিজেন ও এন্টিবডি টেস্টের বিষয়ে একটি নীতিমালা ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে যে সব জেলায় পিসিআর টেস্টের সুবিধা নেই এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে এন্টিজেন পরীক্ষার পরিকল্পনা দাখিল করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরনের কিটের অনুমোদন এখনও না দিলেও তিন পদ্ধতিতে (পিসিআর, এন্টিজেন ও এন্টিবডি টেস্ট) কোভিড-১৯ পরীক্ষা কার্যক্রম পাশাপাশি থাকলে তা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মত দিয়েছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি।
এছাড়া, স্বাস্থ্য কর্মীদের হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের পর কোয়ারেন্টাইনের উদ্দেশ্যে তাদের জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা ও তাদের মধ্যে যারা করোনায় মারা গেছেন তাদের অনুদান প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সঠিক তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ের কাছে দাখিল করার তাগিদ দেয়া হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে।
কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষায় যে সব মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে সরকার যাদের নিয়োগ দিয়েছে তাদের মধ্যে যেসব স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অন্তর্ভুক্ত হননি, তাদের নিয়োগের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে কমিটি।
জাতীয় কমিটির সভায় বলা হয়, করোনা প্রতিরোধ ও এ বিষয়ে জনসাধারণকে আরও সচেতন করতে সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাস্ক বিষয়ক ক্যাম্পেইন দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
এদিকে, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে। তাই সংক্রমণ রোধে কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমিত পরিসরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপন করার জন্য সভায় পরামর্শ দেয়া হয়।