খবর৭১ঃ
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্যাস ও বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ ও নিয়ম না মেনে মসজিদ ভবন নির্মাণকে দায়ী করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তিতাসের তদন্ত কমিটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মসজিদটি নিয়মবহির্ভূতভাবে গ্যাস সংযোগের রাইজার ও পাইপ লাইনের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে এবং এতে পাইপ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ থেকে নির্গত গ্যাস মসজিদের এসির চেম্বারে জমা হলে বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে সৃষ্ট আগুনে গ্যাসের বিস্ফোরণ হয়।
আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন তদন্ত কমিটির প্রধান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল ওহাবের। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তিতাস গ্যাসের নিয়ম-কানুন না মেনে ১৯৯৮ সালে গ্রাহক নিজ উদ্যোগে রাইজারগুলো নরমাল প্লাগ ও সকেট দিয়ে স্থানান্তর করেছে জানিয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান আব্দুল ওহাব বলেন, ‘১৯৯৬ সালে বসানো এই লাইনগুলো দুর্ঘটনাস্থলের নিচে ছিল। তারা লাইনের নিচ দিয়ে মসজিদের বেজমেন্ট করেছে। ২০০০ সালে নিয়ম না মেনেই মসজিদ নির্মাণ করে। মসজিদটি তৈরি করার সময় তারা লাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, গ্যাসলাইন অবৈধভাবে স্থানান্তরিত করে মাটি চাপা দেয়া হয়। পরে মসজিদ নির্মাণের সময় পুরনো লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেখান থেকে গ্যাস লিক হতে থাকে। মসজিদের ফ্লোরে ৬-৮ সিসি ঢালাই না থাকায় সেই গ্যাস জমা হয় মসজিদের এসি চেম্বারে। ঘটনার আগে বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প লাইন চালু করা হয়, আর তাতে সৃষ্ট স্পার্ক থেকে বিস্ফোরণ ঘটে বলে আমরা মনে করছি।’
গ্যাস লিক হচ্ছে সেটা মসজিদ কমিটি কাউকে কিছু জানাননি উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি প্রধান বলেন, ‘একই সঙ্গে মসজিদ নির্মাণে রাষ্ট্রীয় অনুমোদন নেয়ার কোনো দলিল বা কাগজ মসজিদ কমিটি দেখাতে পারেনি।’
গ্যাসলাইন মেরামতের জন্য তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে বলে মসজিদ কমিটির সভাপতির অভিযোগের বিষয়ে আবদুল ওহাব বলেন, ‘কে বা কারা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছেন, তিনি তাদের নাম বা এর কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। গ্যাস লিক করেছে কমিটি আমাদের জানায়নি।’
গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৯টার দিকে ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে গুরুতর দগ্ধ হয় ৩৭। তাদের রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হলে ওই দিনই ১১ জন মারা যান। পরের কয়েক দিনে আরও ২০ জনসহ মোট মারা গেছেন ৩১ জন।
দুর্ঘটনার পরদিন তিতাস গ্যাস আব্দুল ওহাবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বিস্ফোরণের ঘটনায় মসজিদ কমিটি, তিতাস গ্যাস ও ডিপিডিসির অবহেলাকে দায়ী করে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করেন ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবির।