খবর৭১ঃ
তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দুই দেশের জনগণের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ তুরস্কের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে আগ্রহী।’
সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তুরস্কের আঙ্কারা মিশনের বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স উদ্বোধনকালে এই কথা বলেন।
তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীরে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রায় ৫০ বছর আগে ১৯৭৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের শুরু হয়। তবে আমাদের সম্পর্কের শুরু ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তুর্কি জেনারেল ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয়ের মধ্যে দিয়ে। পাস্পরিক আস্থা-বিশ্বাসে ইতিহাস, বিশ্বাস ও ঐতিহ্যে ওপর ভিত্তি করে দুই দেশের সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীরে।’
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের জনগণের দ্বিপক্ষীয় সুবিধার জন্য বাংলাদেশ তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে আগ্রহী।’ তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ বিশেষ গুরুত্ব দেয় বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া এই নীতিই আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূলনীতি।’
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নই দেখেননি। তিনি ক্ষুধা, দারিদ্র সংঘাত মুক্ত বিশ্বের স্বপ্নও দেখেছেন। মানব কল্যাণে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করে গেছেন তিনি।’
রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য তুর্কি জনগণ ও দেশটির সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে তুর্কি প্রেসিডেন্ট ও তুর্কি ফাস্ট লেডিকে ধন্যবাদ দেন তিনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সবধরনের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ। আমি মনে করি, প্রায় তিন বছর হতে চলেছে। রোগিঙ্গা জনগোষ্ঠীর তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। আমি মনে করি এই ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
২০১২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের আমন্ত্রণে আঙ্কারা সফরের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন নির্মাণে তুর্কি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের প্রশংসা করেন তিনি।
চলমান করোনা মহামারি সংকটের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারিতে বিশ্ব এক কঠিন সময় পার করছে। এই মহামারি বিশ্বের অধিকাংশ দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং অর্থনীতিকে স্থবির করে দিয়েছে।’
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলদেশে আমরা সফলতার সঙ্গে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পেরেছি। একই সময়ে আমাদের সময়োপোযোগী এবং সঠিক পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ নেয়ার মাধ্যমে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের ধ্বংসাত্মক প্রভাব কিছুটা মোকাবেলা করতে পেরেছি।’ প্রাণঘাতী করোনা মোকাবেলায় সফলতার জন্য তুর্কি নেতৃত্বের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
আঙ্কারার বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব ভবন নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে ভবনটি নির্মাণে দুই কোটি ২৬ লাখ টাকা কম ব্যয় হয়েছে। ওই টাকা বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে ফেরত দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগলু, তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দীকী।