খবর৭১ঃ শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সম্মিলিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সন্ধ্যায় প্রথমবারের মতো পালিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে টু প্রটেক্ট ইজুকেশন ফ্রম অ্যাটাক’ অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে প্রচারিত পূর্বে ধারণকৃত ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংকট আমাদের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা দেখিয়ে দিয়েছে। বর্তমান সংকট শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ এবং সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সম্মিলিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।’
সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসুন প্রতিটি পরিস্থিতিতে শিক্ষা নিশ্চিতে আরও বেশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা নিশ্চিতভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ চাওয়ার দিকে নিয়ে যাবে।’
করোনায় শিক্ষা সেক্টরে ভয়াবহ ক্ষতি সাধনের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘চলমান কোভিড-১৯ মহামারিতে শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরটিও গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এই সংকটের কারণে সারা বিশ্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ।’
এ সময় করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘করোনা সংকট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সরকার অলস বসে থাকেনি। শিক্ষার্থীদের জন্য টেলিভিশন এবং অনলাইনে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনায় যুক্ত থাকে সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে শিক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ একটি অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। জাতির পিতার দর্শনকে অনুসরণ করে সরকার শিক্ষায় বেশি বিনিয়োগ করে আসছে।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা, শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিশু ও বিশেষ চাহিদা শিশুসহ প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
শুধু ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ৩৫৩ মিলিয়ন পাঠ্য বই বিনামূল্যে বিতরণ এবং ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে পর্যান্ত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেয়ার কথা উল্লেখ করেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ২০ দশমিক ৩ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যরন্ত ছাত্রীদের বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ নিশ্চিত করার কথা তুলে ধরেন তিনি।
এসব সকল ব্যবস্থার পাশাপাশি লিঙ্গ-সংবেদনশীল পন্থা, স্কুল ফিডিং কর্মসূচি, প্রায় প্রতিটি গ্রাম এবং ওয়ার্ডে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, আইসিটি শিক্ষার মতো বিভিন্ন উদ্যোগ শিক্ষা সম্প্রসারণে ত্রিমাত্রিক সুবিধা ও ফলাফল এনে দিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ভিডিও বার্তা প্রদান দেন ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট লুইস অ্যাবিনডার, জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তেনিও গুতেরেস, জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট জারিয়া, গ্রাকা মাচেল ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতিসংঘের এসডিজি বিষয়ক অ্যাডভোকেট গ্রাকা মাচেল, গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এজুকেশন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এলিচ অ্যালব্রাইট, জাতিসংঘের এসডিজি বিষয়ক অ্যাডভোকেট এডওয়ার্ড এনডোপু।
ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে বক্তব্য দেন নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী ও তাওয়াককোল আবদেল-সালাম খালিদ কারমান এবং বেয়ারফুট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শাকিরা।