পটুয়াখালীর মহিপুরের ওসি’র দুর্নীতি, অনিয়মের বিষয়ে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য নিল তদন্ত কমিটি

0
369
পটুয়াখালীর মহিপুরের ওসি’র দুর্নীতি, অনিয়মের বিষয়ে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য নিল তদন্ত কমিটি

রাকিব হাসান পটুয়াখালীঃ পটুয়াখালীর মহিপুর থানার ওসি মো: মনিরুজ্জামানের দুর্নীত, অনিয়ম ও চাঁদাবাজির বিষয়ে ভুক্তভোগীদের বিক্তব্য নিল তদন্ত কমিটি। শনিবার (২৫জুলাই) কুয়াকাটার পানি উন্নয়ন বোর্ড’র রেষ্ট হাউজ ধানসিঁড়িতে সকাল থেকে দুপুর অবধি ওসি’র রোষানলে পড়ে শারিরীক, মানসিক ও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক মানুষ তদন্ত কমিটির কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরে। তদন্ত কমিটির কাছে ভুক্তভোগীরা তাদের কথা বলতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তদন্ত কমিটির প্রধান ও জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন তিঁনি তাঁর সর্বোচ্চ মেধা ও শ্রম দিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে এ তদন্ত করছেন।এরআগে মহিপুর ওসি’র বে-আইনী কর্মকান্ডের বস্তুনিষ্ঠ তথ্য গনমাধ্যমে প্রকাশের পর পুলিশ বিভাগ সহ সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে।

এনিয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কলাপাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা গোয়েন্দা শাখার একজন ইন্সপেক্টরকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি করা হয় ওসি’র কর্মকান্ডের তদন্তে। এছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের সিকিউরিটি সেল’র একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত করছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তবে ওসিকে স্ব-কর্মস্থলে রেখে এ তদন্ত যথাযথ হবে কিনা তা নিয়ে এখনও অনেকটা প্রশ্ন রয়ে গেছে। কেননা মহিপুর ওসি’র বে-আইনী কর্মকান্ড নিয়ে সংক্ষুব্ধ মানুষ, যাদের নাম ঠিকানা প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে তারা যাতে তদন্তকারী কর্মকর্তা বা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে তাদের শারিরীক, মানসিক ও আর্থিক নির্যাতনের তথ্য প্রকাশ না করে সেজন্য নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন ওসি মনিরুজ্জামান। এমনকি তিঁনি বরিশাল থেকে প্রকাশিত দু’টি আঞ্চলিক দৈনিকে তদন্ত কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে ’মহিপুর থানার ওসি’র চেষ্টায় আইনের সেবা নিতে আগ্রহী হচ্ছে সাধারন মানুষ’ শিরোনামে পক্ষপাত মূলক তথ্য উপস্থাপনে বরিশালস্থ ক’গনমাধ্যম কর্মীকে তথ্য সরবরাহ করেছেন, যা শনিবার (২৫জুলাই) প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্ভরযোগ্য সূত্র।এদিকে মহিপুর থানায় ওসি হিসেবে ২মার্চ ২০২০ মনিরুজ্জামান (বিপি-৭৮০৪১২১৯০৩) যোগদানের মাত্র ক’মাসের মধ্যেই আলোচিত হয়ে ওঠেন তিনি। এমনকি অভিযোগ, মামলা কিংবা আদালতের ওয়ারেন্ট ছাড়াই তিঁনি নিরপরাধ নারী, পুরুষকে থানার লকআপে আটক রেখে ১০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে ছেড়ে দেন, এরকম এন্তার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। দাবীকৃত টাকা না পেলে আটকৃকতদের গুরুতর অপরাধের মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকী প্রদানের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। টাকা না দেয়ায় থানায় একাধিক বার গিয়েও আইনী সহায়তা না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন হয়। আদালতের আদেশ পালনে গাফেলতিতে বিজ্ঞ আদালত ওসি মনিরুজ্জামানকে কে ৭২ ঘন্টার মধ্যে কারন দর্শানোর নির্দেশ দেয়।

ধূলাসার ইউনিয়নের নয়াকাটা গ্রামের ভুক্তভোগী ইব্রাহিম (৫০) বলেন, ’আমি আমার মেয়ে রেবা (৩০) কে থানায় ধরে আনা, কোর্টে না পাঠিয়ে প্রায় দুই রাত একদিন থানার লকআপে আটকে রাখা ও পরে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে রোজার ঈদের আগের দিন শনিবার (২৩ মে) রাত দেড়টা দুইটার দিকে তাকে ছাড়িয়ে আনার কথা বলেছি। তদন্তে যারা এসেছে তাঁরা ভাল মানুষ। আমাকে চাচা বলে সম্বোধন করেছে। আমাকে তাঁর ফোন নম্বর দিয়ে গেছে। কোন সমস্যা হলে ফোন দিতে বলেছে। এবার আশা করছি আমি প্রতিকার পাবো।’ লতাচাপলি ইউনিয়নের শারিরীক নির্যাতনের শিকার মোঃ আবুল কালাম (৪২) বলেন,’ আমাকে লক্ষ্য করে ওসি’র নির্দেশ পুলিশ ইট জাতীয় ভারী কিছু নিক্ষেপ করলে তা পায়ের গোড়ালীর উপর পড়ে হাড় ফেটে যায়। আমি নির্যাতনের এ বিষয়টি তাঁদের বলেছি। তাঁরা আমার বক্তব্য লিখে স্বাক্ষর নিয়েছে।’জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও তদন্ত কমিটির প্রধান মাহফুজুর রহমান বলেন, ’মহিপুর ওসিকে নিয়ে শুধু গনমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ছাড়াও এর বাইরেও আমরা (তদন্ত কমিটি) নিবিড় ভাবে তদন্ত করে দেখছি। আমার কমিটির অন্য দু’সদস্য কলাপাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহম্মেদ আলী ও জেলা গোয়েন্দা শাখার ইন্সপেক্টর আনেয়ার সাহেব এসময় উপস্থিত ছিলেন।’ তদন্ত কমিটির প্রধান আরও বলেন, ’এটি (তদন্ত) শেষ করতে একটু সময় লাগবে। তদন্ত শেষে পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন দেয়া হবে। এ বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here