ফুঁসে উঠেছে তিস্তা, ১৫ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৪৭ সেমি

0
310
ফুঁসে উঠেছে তিস্তা, ১৫ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৪৭ সেমি

খবর৭১ঃ উজানের পাহাড় ও সমতলে একটানা বৃষ্টি ও গজলডোবা হতে পানি ছেড়ে দেয়ার জেরে ফুঁসে উঠেছে তিস্তা নদী। শুক্রবার সকাল ৬টার পর হতে ১৫ ঘণ্টায় নদীর পানি ৪৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে রাত ৯টায় বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৬০) ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

অথচ এ দিন সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। সেই সঙ্গে ঢলের পানি দ্রুতগতিতে অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে।

নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সূত্র মতে, চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর পানি সর্ব প্রথম গত ২০ জুন বিপদসীমার উপরে উঠে। যা পরের দিন ২১ জুন সকালে নেমে যায়। এর ৬ দিনের মাথায় ২৬ জুন তিস্তা নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় পুনরায় বিপদসীমা অতিক্রম করে ২০ সেন্টিমিটার উপরে উঠে ২৮ জুন সকালে নেমে যায়।

এরপর তৃতীয় দফায় ৪ জুলাই সকালে তিস্তার পানি ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ওইদিন সন্ধ্যায় তা নেমে গিয়েছিল। এবার শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে উজানের পানি বেড়ে গেলে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে চলে আসে। তিন ঘণ্টা পর উজানের ঢল আরও ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে যায়। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় আরও বৃদ্ধি পায় ১৩ সেন্টিমিটার। ফলে তিস্তা ১২ ঘণ্টায় পানি ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর (৫২ দশমিক ৮৮) দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রাত ৯টায় তা আবারও ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে সেই সঙ্গে প্রচণ্ডভাবে উজানের ঢল ধেয়ে আসা অব্যাহত রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নীলফামারীর ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

এদিকে ওপারে দোমহনী হতে বাংলাদেশের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ভারত কর্তৃপক্ষ তিস্তা নদীর অরক্ষিত এলাকায় লাল সংকেত জারি করেছে।

উত্তরাঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, উজানে ভয়াবহতার কারণে ভারত লাল সংকেত জারি করেছে। অপরদিকে বাংলাদেশ অংশে হলুদ সংকেত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে লাল সংকেত দেয়া হবে। তিস্তা ব্যারাজের কর্মকর্তারা নজরদারীতে মাঠে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে উজানের ঢলে তিস্তায় চতুর্থ দফায় ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা অববাহিকায় নতুন করে ১৫ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চরবেষ্টিত গ্রামের মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ৬ ইউনিয়ন, পূব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী ও ঝুনাগাছ চাঁপানীর ইউপি চেয়ারম্যানগন জানায়, তিস্তায় ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। ডিমলার কিছামত ছাতনাই, ঝাড় শিঙ্গেশ্বর, চর খড়িবাড়ি,পূর্ব খড়িবাড়ি, পশ্চিম খড়িবাড়ি, তিস্তা বাজার, তেলির বাজার, বাইশ পুকুর, ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখানকার মানুষজন গরু ছাগল, জিনিষপত্র নিয়ে নিরাপদে সরে গেছেন। প্রায় ৫ হাজার পরিবার নতুন করে বন্যা কবলিত হয়েছে।

পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, পরিস্থিতি ভাল না। উজানের ঢল প্রচণ্ডভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এবার ভয়ংকর বন্যা হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

খগাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, দুপুরের পর হতে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে মানুষজনকে সরিয়ে নিতে কষ্ট পেতে হয়। ডিমলা উপজেলায় তিস্তা এলাকায় সরকারিভাবে ৬টি নৌকাসহ অসংখ্য নৌকা বন্যা কবলিত মানুষজনকে সরিয়ে নিতে সহায়তা করছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here