হাওর পাড়ের ৪ কন্যার ৩৮তম বিসিএস ক্যাডার

0
967
হাওর পাড়ের ৪ কন্যার ৩৮তম বিসিএস ক্যাডার
ছবিঃ আব্দুল আওয়াল।

খবর৭১ঃ

আব্দুল আওয়ালঃ নেত্রকোনার মদন উপজেলার হাওর পাড়ের ৪ কন্যার এবার এই প্রথম সদ্য প্রকাশিত ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিভিন্ন ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁদের এ অসামান্য সাফল্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজ বুক ফেইজে রীতিমত খবরটি শুভাকাঙ্খীদের অভিনন্দনে ভাইরাল হয়েছে।

প্রত্যন্ত অঞ্চল ফতেপুর গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান সবল চৌধুরীর মেয়ে পায়রা চৌধুরী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার, একই গ্রামের আলী আকবর ভূঁইয়ার মেয়ে রাহিমা সুলতনা শিক্ষা ক্যাডার, বাঘমরা গ্রামের সাবেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান পুতুল মাস্টারের মেয়ে সামিয়া সুলতানা সুধা শিক্ষা ক্যাডার ও কুলিয়াটি গ্রামের ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম তালুকদার (পুতুল) মিয়ার মেয়ে মায়মুনা স্বর্ণা শিক্ষা ক্যাডারে চূড়ান্ত ভাবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। জানা যায়, পায়রা চৌধুরী ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজ থেকে ২০১৫ সালে স্নাতক ও ২০১৬ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন। পায়রা চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল প্রশাসনিক ক্যাডার ।

তিনি বলেন, আমার মরহুম এ্যাডভোকেট চাচা মাঈনুল হক চৌধুরীকে দেখে বুঝতে পেরেছি মানুষের ভালবাসা কি ! সে থেকেই একটা তাগাদা ছিল বিসিএস (প্রশাসন ক্যাডার) আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এই কঠিন পথে মা বাবা,ভাই,বোন,শিক্ষকদের কাছে চিরকৃজ্ঞ। এই এডমিন ক্যাডার যেনো আমাকে আমার পূর্ব পুরুষদের যোগ্য উত্তরসূরী বানাতে পারে। ফলাফলের অনুভতি জানতে চাইলে পায়রা চৌধুরী জানান, আমার রোলটা দেখে আমি অঝোরে কান্না আসছিল। শরীরে কোন শক্তি পাচ্ছিলাম না। সবাই ভাবছিল আমি চেতনা হারিয়ে ফেলবো। আম্মা-আব্বা বোনকে জড়িয়ে ধরে কাদঁছিলাম। অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে যতটুকু কষ্ট জমা হয়েছিল সেই কষ্টটাকে অশ্র হিসেবে ঝরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন মনে হলো কিছু যদি না বলি তবে আমি ফেল করছি ভেবে আমার মা-বাবা স্ট্রোক করে ফেলে তাই জোর করে হেসে বললাম তোমাদের মেয়ে এডমিন ক্যাডার হয়েছে। আতœীয়-স্বজন- প্রতিবেশি সবাই আমাকে অভিন্দন জানাতে লাগল। এডমিন ক্যাডার যেনো আমাকে মানুষের জন্যে কিছু করার সুযোগ দেয়। রাহিমা সুলতনা ২০১০ সালে আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বি এ অনার্স (ইংরেজি), একই কলেজ থেকে ২০১১ সালে (ইংরেজি) স্নাতকোত্তর পাস করেন। তিনি বলেন, দেশের মানুষের সেবা করার প্রয়াশে ৩৭তম বিসিএসে প্রথমঅংশ গ্রহণের মাধ্যমে সাব-রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পাই।

৩৮ তম বিসিএস এর মাধ্যমে প্রিয় পেশা শিক্ষা ক্যাডার সুপারিশ প্রাপ্ত হই। তিনি আরো বলেন, আমি দীর্ঘদিন দেশের বাহিরে শিক্ষা পেশায় নিয়োজিত ছিলাম তাই আবার শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে সত্যি আমি আনন্দিত। আমার এ অভিজ্ঞতা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে কিছুটা হলেও কাজে লাগতে পারবো বলে আমি আশা করি। সামিয়া সুলতানা সুধা, ২০১০ সালে ত্রিশাল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ,২০১৪ সালে একই কলেজ থেকে এমবিএ পাস করেন। পরিবার থেকেই সবচেয়ে অনুপ্রেরণা পেতেন সুধা। সুধা বলেন,তার প্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎসাহ পেয়েছেন বাবা, বড় ভাই, মা ও স্বামী। তাকে মেয়ে হিসেবে দেখেনি তার পরিবার। বাবা মায়ের জন্য অনেক ভালো করতে হবে এমনটাই বিশ্বাস করতেন তিনি। বর্তমানে তিনি সোনালী ব্যাংকে অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি আরো জানান, আমার বাবা ,ভাই শিক্ষক এ থেকেই আমি এ পেশা খুবই পছন্দ করি। শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। মাইমুনা স্বর্ণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ (বাংলায়) স্নাতক ও ২০১৬ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। তিনি জানান, আমার শিক্ষকরা আমার জীবনের বিশেষ গুরুত্বরপূর্ণ। শিক্ষকদের আমার কাছে সাধক মনে হয়।

আমার মানস সত্তা গঠনে যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন আমার মা। ছোট বেলা থেকে এই ভেবে বড় হয়েছি মানুষের জন্যে করবো। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে কাজ করার সুযোগ পাওয়া মানে মানুষের কাছ থেকে সেবার সুযোগ। আমার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হব। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমার উপর যে দায়িত্ব এসেছে তা যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি। এ ছাড়া উপজেলায় সেলিমুল হক লেলিন এস এসপিসহ আরো ৪ জন বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। প্রসঙ্গত,গত মঙ্গলবার বিকেলে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে সকরকারি কর্ম কমিশন (পিএসপি)। এতে ২ হাজার ২০৪ জন প্রার্থীকে ক্যাডার পদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া নন-ক্যাডারে আরও ৬ হাজার ১৭০ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here