৩৪ লাশ উদ্ধার অভিযান শেষ

0
341
মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড: নৌ প্রতিমন্ত্রী

খবর৭১ঃ
দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল উদ্ধার অভিযান চালায় কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ছবি: ইত্তেফাক
ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবির ঘটনায় দুই দিনে ৩৪ জনের লাশ উদ্ধারের পর তল্লাশি অভিযান শেষ হয়েছে। সোমবার সকাল সোয়া ৯টায় লঞ্চডুবির প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় উদ্ধার অভিযান শেষ করা হয়। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন জানিয়েছেন, ডুবে যাওয়া লঞ্চ এম এল মর্নিং বার্ডকে টেনে সদরঘাটের কুমিল্লা ডকইয়ার্ডের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভেতরে আর কোনো মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত কেউ নিখোঁজ নেই। স্বজনের দাবি নিয়েও কেউ আর আসেননি।

লঞ্চডুবির পর সোমবারই ৩২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। গতকাল সকালে এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করে ডুবুরিরা। দুপুরে নদীতে ডুবে থাকা লঞ্চটির ভেতরে মর্নিং বার্ডের ইঞ্জিন গ্রিজার আশিক হোসেনের লাশ ভেসে ওঠে। সব মিলিয়ে ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। সবগুলো লাশই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চ উদ্ধারে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা উদ্ধারকারী জাহাজের ধাক্কায় বুড়িগঙ্গা সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ার পর সোমবার রাত থেকেই সেখানে ভারী যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। গতকাল সওজ বিভাগের এক্সপার্ট টিম পরিদর্শন করার পর সেতুটিকে ঝুঁঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে।

লঞ্চডুবির পর সোমবার টানা তল্লাশি চালানো হয়। এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় আবার তল্লাশি শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদের পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ এবং বিআইডব্লিউটিএর কর্মীরাও এই অভিযানে অংশ নেন। নদীর ৫০-৬০ ফুট গভীরে উলটে থাকা লঞ্চটিকে টেনে তুলতে ১১টি এয়ার লিফটিং ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। এর একেকটি ব্যাগ ৮টন ওজন তুলতে পারে। বিআইডব্লিউটিএর ছোট উদ্ধারকারী জাহাজ দুরন্তও এ কাজে যুক্ত ছিল।

মামলা-তদন্ত কমিটি

এ দুর্ঘটনায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’ ঘটানোর অভিযোগ এনে ইতিমধ্যে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক, মাস্টার, সুকানিসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সোমবার রাতে নৌপুলিশ সদরঘাট থানার উপপরিদর্শক শামসুল বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় এই মামলা করেন। এই মামলায় কয়েক জন গ্রেফতার আছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিএ-এর পক্ষ থেকে আলাদা দুইটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

লাপাত্তা ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক-চালক

ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক ও চালককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনার পর থেকে তারা সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। জানা গেছে, ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদ। ঢাকার বাসিন্দা মোসাদ্দেকের কোম্পানির নাম সি-হর্স করপোরেশন। তিনি ময়ূর-২ লঞ্চের রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন এই কোম্পানির নামে।

জানা গেছে, ময়ূর-২ লঞ্চের চালক শিপন হাওলাদার। যোগাযোগ করা হলে বর্তমানে তিনি ছুটিতে রয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, আমি বেশ কিছুদিন ধরে ছুটিতে আছি। ঘটনার সময় লঞ্চ ছিলাম না। তার অবর্তমানে লঞ্চের মাস্টার লঞ্চটি চালাচ্ছিলেন বলে জানান তিনি। তবে তিনি মাস্টারের নাম বলেননি।

ময়ূর-২-এর আঘাতে ডুবে যাওয়া মর্নিং বার্ড লঞ্চের মালিক দুই জন। তারা হলেন—মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন ও আব্দুল গফুর। ‘তালতলা ওয়াটার ওয়েজ’ কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রেশন রয়েছে মর্নিং বার্ড লঞ্চের। বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও এই লঞ্চের দুই মালিকের কাউকেই পাওয়া যায়নি।

তদন্ত শুরু

লঞ্চডুবির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। গতকাল প্রথম কার্যদিবসে তিন জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে কমিটি। অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীদের কমিটির কাছে এসে সাক্ষ্য দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বুড়িগঙ্গা সেতু ঝুঁঁকিপূর্ণ ঘোষণা

রাজধানীর পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১ (প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু) ঝুঁঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। পাশাপাশি ঐ সেতুতে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চার লেনের সেতুটিতে যানবাহন সীমিত ঘোষণা করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here