লকডাউনে লাখো শিশু জন্ম নেবে ফিলিপাইনে

0
721
লকডাউনে লাখো শিশু জন্ম নেবে ফিলিপাইনে

খবর৭১ঃ করোনা প্রতিরোধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ফিলিপাইনে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়। এই লকডাউনের কারণে দেশটিতে করোনার প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমলেও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এ কারণেই গত দুই দশকে দেশটিতে সর্বোচ্চসংখ্যক শিশুর জন্ম হতে পারে, যা দেশটির জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফিলিপাইনের স্বাস্থ্যকর্মীদের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনা প্রতিরোধে দেশটিতে গত মার্চ মাসে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়। এতে যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রোগী বা স্বাস্থ্যকর্মীরাও অনেকে হাসপাতালে যেতে পারেননি। যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে দেশটির নানা এলাকায় জন্মনিরোধক ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে।

ফ্যামিলি প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন অব দ্য ফিলিপাইনসের (এফপিওপি) নির্বাহী পরিচালক ন্যান্দি সেনোক বলেন, লকডাউনে সরকারি ঘোষণায় জরুরি সেবা চালু ছিল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ওসব কোনো সেবাই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি লকডাউনের কারণেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিপাইনে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে দেশটির রাজধানী ম্যানিলায়। করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৪৪ জনের। এই ভাইরাস প্রতিরোধে দেশটিতে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়। এতে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। সীমিত পরিসরে জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা চালু থাকলেও তা খুব একটা কার্যকর হয়নি। এ ছাড়া যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার কারণে জন্মনিরোধক সংকটে পড়ে দেশটি। বিশেষ করে রাজধানী থেকে দূরের দ্বীপপ্রদেশ প্রত্যন্ত গ্রামে এই সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

ন্যান্দি সেনোক বলেন, ‘এফপিওপি নারীদের এখন দীর্ঘ মেয়াদে গর্ভনিরোধ করার জন্য উৎসাহিত করছে। তবে সমস্যা হলো, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে ওই ব্যবস্থা করার মতো সরবরাহ নেই। এ পরিস্থিতিতে প্রজনন স্বাস্থ্য পরিষেবাও সরকার খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। লকডাউনের কারণে প্রজনন স্বাস্থ্য পরিষেবা নিতে না পারা নারীর সংখ্যা এখন এক-পঞ্চমাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৬ লাখ ৮৮ হাজার।’

ইউনিভার্সিটি অব দ্য ফিলিপাইনস পপুলেশন ইনস্টিটিউট ও ইউএনএফপিএ বলছে, করোনা মহামারির কারণে নারীরা অপরিকল্পিতভাবে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। এ কারণে আগামী বছর স্বাভাবিক শিশু জন্মের পাশাপাশি প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার অতিরিক্ত শিশুর জন্ম হবে দেশটিতে। এতে সব মিলিয়ে আগামী বছর দেশটিতে ১৯ লাখ শিশুর জন্ম হবে, যা গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যা।

ম্যানিলার হোসে ফাবেলা মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক এসমেরালদো ইলেম বলেন, তাঁদের হাসপাতালে নয় মাসের মধ্যে সন্তান প্রসব করানো হয়। এই হাসপাতালে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে সেবা নিতে আসা মানুষে গিজগিজ করত। তবে গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্য হারে রোগী আসা হ্রাস পেয়েছে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ফিলিপাইনের স্থানীয় যানে এভাবে পলিথিন দিয়ে সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। ছবি: রয়টার্সদেশটির উত্তরাঞ্চলীয় লা ইউনিয়ন প্রদেশের গ্রামীণ স্বাস্থ্য হাসপাতালের চিকিৎসক রোসেলা কাসিলা বলেন, এই হাসপাতালে আসা কিছু রোগী জানিয়েছেন, তাঁরা জন্মনিরোধক ছাড়াই শারীরিক সংসর্গ করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখানকার নারীরা জন্মনিরোধক হিসেবে ইনজেকশন নিতে পছন্দ করেন। এই ইনজেকশন তাঁদের তিন মাসের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে। যাঁদের নতুন করে আবার ইনজেকশন নেওয়ার কথা ছিল গত এপ্রিলে, কঠোর লকডাউনের কারণে তাঁরা জুন মাসে তা নিতে এসেছেন। এর মধ্যে কিন্তু জন্মনিরোধক ছাড়াই দুই মাস পেরিয়ে গেছে।’

ইউএনএফপিএ বলছে, কোভিড-১৯ মহামারি সারা বিশ্বের প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এর কারণে বিশ্বে ৭০ লাখেরও বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত শিশুর জন্ম হবে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনার কারণে লকডাউন জারি হওয়ায় বিশ্বে পারিবারিক সহিংসতাও ব্যাপক হারে বাড়ছে। ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যান্ড প্যারেন্টহুড ফেডারেশনসের পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের পরিচালক তোমোকো ফুকুদা বলেন, দীর্ঘ লকডাউনের কারণে মানুষ এখন ঘরবন্দী হয়ে আছে। মানুষ তাঁদের যৌনস্বাস্থ্যের বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন না। এতে পারিবারিক সহিংসতা বাড়ছে। ঘরবন্দী মানুষ বাইরে বের হতে না পারায় তা অনেক কিছুর ওপর প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে বাড়িতে থাকা নারীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

মেরি স্টোপস ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, এসব কারণে সারা বিশ্বে লাখো গর্ভপাতের ঘটনা ঘটবে। আর এতে মাতৃমৃত্যুও অসংখ্য ঘটবে। তবে ফিলিপাইনে হয়তো তা হবে না। কারণ, দেশটিতে গর্ভপাত আইনবিরোধী কাজ।

সেন্ট্রাল ফিলিপাইনসে ইলোইলো শহরের এফপিওপি চ্যাপটার ম্যানেজার মোনা লিজা দিওন্স বলেন, তাঁদের কর্মীরা অনলাইনে নারীদের স্বাস্থ্য দিচ্ছেন। আর প্রত্যন্ত এলাকায় কর্মীরা নারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। লকডাউনে নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামও নেই। এর মধ্যেই চেষ্টা চলছে। তাঁদের কাছে ওষুধসহ জন্মনিরোধকও (কনডম) আর অবশিষ্ট নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here