করোনাকালে একাত্তরে আওয়ামীলীগ আর একটাই প্রত্যাশা

0
444
শুভ জন্মদিন বঙ্গমাতা
লেখকঃ অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও অর্থ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

খবর৭১ঃ আজ আওয়ামীলীগের একাত্তরতম জন্মদিন। একাত্তরে স্বাধীন এই দেশটার স্বাধীনতার প্রতিটি ইট পাথরের গাথুনিতে খোঁদাই করা আওয়ামীলীগের নাম। একজন বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আর তিনি এই দলটির হাল না ধরলে ইতিহাস আজকের বর্তমানকে কোথায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাতো জানিনা, তবে এতটুকু জানি, বাংলাদেশ নামে আজকের এই যে দেশটি দক্ষিণ এশিয়ায় এক লক্ষ পঞ্চান্ন হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে সগৌরবে প্রতিনিয়ত নিজের স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করে চলেছে, তার জন্ম হতো না। এটি হতে পারতো পাকিস্তানের কোন কলোনি, অবাক হতাম না যদি এটি আজও ভারতের কোন প্রদেশ হিসেবে রয়ে যেত। আবার ইদানীং কালে যা মনে হচ্ছে একটি বিতর্কিত ভূখণ্ড নিয়ে প্রতিবেশী দুই বড় দেশের রেশারেশির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারতাম হয়তো আমরা। কিন্তু সেরকম কিছুই হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে একাত্তরে। আর এটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির প্রজ্ঞা আর নেতৃত্বে তিনি বঙ্গবন্ধু আর এই সপ্নকে স্বপ্নের জায়গা থেকে মানচিত্রে নামিয়ে আনায় বঙ্গবন্ধুর পেছনে ছিল যে রাজনৈতিক সংগঠনটি তার নাম বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। সেই আওয়ামীলীগের আজ একাত্তর বছর। নানা কারণে আওয়ামীলীগের এবারের এই জন্মদিনটি আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এবার একাত্তরে পা দিলো আওয়ামীলীগ। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বেই একাত্তরে যে দেশটির জন্ম, সে দেশটির শাসন ক্ষমতায় আজ আওয়ামীলীগ এবং সেই আওয়ামীলীগের আজ একাত্তর হচ্ছে। এটি হল সংখ্যাতাত্ত্বিক আবেগের জায়গা। তবে তারচেয়ে যে বড় কারণ, তা হল আজ আভ্যন্তরীণ বৈশ্বিক এমন একটি প্রেক্ষাপটে আওয়ামীলীগের জন্মদিনটি উদযাপিত হতে যাচ্ছে যা অভূতপূর্ব।

পুরো পৃথিবী এখন কোভিড জ্বরে আক্রান্ত। পৃথিবীতে বহুলক্ষ আর বাংলাদেশে এক লাখেরও বেশি মানুষ কোভিডে আক্রান্ত। এদের মধ্যে আমিও একজন। দীর্ঘ তালিকায় আছে আমার স্ত্রী ডা: নুজহাত আর আমাদের একমাত্র ছেলে সূর্যর নামও। এই কোভিডকে যতভাবে এবং যত কাছ থেকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে, অনেকেরই তা হয়নি। এদেশে একদম শুরুর দিকে কোভিড নিয়ে যে প্রথম বৈজ্ঞানিক সেমিনারটি সেটি আমি আয়োজন করেছিলাম ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে মূল প্রবন্ধটি উপাস্থাপন করেছিলেন জাপানের এহিমে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর। তার পর থেকে ডাক্তারি, লেখালেখি আর মিডিয়ায় বলাবলি যখন যেভাবে পেরেছি সব জায়গায় সংযুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি এবং এখনতো আমি নিজেই একজন কোভিড রোগী।

কোভিড ব্যবস্থাপনায় যা কিছু সাফল্য, তার সুবিধাভোগী যেমন আমি, তেমনি যা কিছু ব্যর্থতা তার ভুক্তভোগীও আমি কম নই। তবে আমি কৃতজ্ঞ স্রষ্টার কাছে কারণ এই দুর্যোগ মুহূর্তে দেশের ক্ষমতায় আছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কারণ কোভিড মোকাবেলায় যেটুকু সুবিধা আমি ভোগ করেছি তার কিছুই আমি ভোগ করতে পারতাম না যদি আজ থেকে বারোটি বছর আগে এদেশে কোভিড হানা দিতো, আর যা কিছু দুর্ভোগ আমি ভোগ করছি আওয়ামীলীগ এদেশে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও, তা শত গুণে বেড়ে যেতো যদি আজ আওয়ামীলীগ এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় না থাকতো। তারপরও একটু আক্ষেপ। আমি সবাইকে বলি কোভিড মোকাবেলাটি হচ্ছে গাড়ি চালানোর মতো। খালি নিজে ভাল মতো গাড়ি চালালে হবে না, আশেপাশের সবাইকেও ঠিকঠাকক মতো গাড়িটা চালাতে হবে। আমি নিজে কোভিড নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এবং এক পর্যায়ে আক্রান্ত হয়ে বুঝতে পেরেছি, আমার আশেপাশের যারা আছেন, তারা সবাই যদি সচেতন না হন তবে আমি যতই সচেতন হই না কেন, কোভিড থেকে আমার মুক্তি নেই। আমার কেন যেন মনে হয়, কোভিড মোকাবেলায় আমাদের যে সাফল্য তা আরও বড় হতে পারতো, যা কিছু ব্যর্থটা মুছে যেতে পারতো যদি না আওয়ামীলীগ আরেকটু উদ্যোগী হতো, আরেকটু সতর্ক হতো। সাড়ে এগারোটি বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামীলীগে যে কিছুটা উদাসীনতা এসেছে, সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই এবং আমার কেন যেন মনে হয় সেই সুযোগে বড় আপার এতো সব উদ্যোগের যে এতো সব সুফল, তার সব কিছু সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় না পৌছে, কিছু কিছু ইঁদুরের পেটে চলে যায়। আওয়ামীলীগের এই উদাসীনতার সুযোগে ইঁদুরগুলো শিধ কেটে ঢুকে পরেছে আওয়ামীলীগের ইউনিয়ন কমিটি থেকে শুরু করে এমনকি আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বড় বড় জায়গাগুলোতেও।

আমাদের প্রত্যাশা এখন একটাইআওয়ামীলীগ একটু গা ঝাড়া দিক, একটু সচেতন হোক। সাম্প্রতিককালে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের একটি ভিডিও বার্তা আমাকে অন্তত দারুনভাবে আশান্বিত করেছে। একজন কোভিড রোগী হিসেবে তার ভিডিও বার্তায় আমি এতোটাই আশান্বিত হয়েছি যে একজন কোভিড রোগীর অন্তরের অন্তঃস্থলের সবটুকু ভালোবাসা পোঁছে গেছে এই তার জন্য।

আমি প্রত্যাশা করবো আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের এই যে ঘোষণা, এটি অনুরণিত হবে আওয়ামীলীগের প্রতিটি পর্যায়ে, প্রতিটি স্তরে। আর তাই যদি হয়, আজ থেকে আরও একাত্তরটি বছর পরে যখন আমি থাকবো না, কিন্তু আমি নিশ্চিত তখন আমার সূর্য আওয়ামীলীগের একশ বিয়াল্লিশতম বার্ষিকীতে পৃথিবীর প্রাচীনতম দলটিকে শাসন ক্ষমতায় দেখতে পাবে। করোনা কালে একাত্তরে যখন আওয়ামীলীগ, দলটির কাছে প্রত্যাশা আমার একটাইএকটু গাটা ঝাড়া দিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here