খবর৭১ঃ করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির বিবেচনায় যেসব এলাকা ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে সেসব এলাকায় যা করা যাবে, যা যাবে না-এ বিষয়ে বিধি-নিষেধ উল্লেখ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সোমবার রাতে কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে জোনিং সিস্টেম বিষয়ক কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপের সদস্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ফাইলেরিয়াসিস ইলিমিনেশন অ্যান্ড এসটিএইচ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. জহিরুল করিম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ বিধি নিষেধের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাইরাস সংক্রমণের পরিমাণ বাড়ছে। তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মল আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৬১ নম্বর আইন) এবং সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারের অনুরোধক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা কভিড-১৯ রোগের ঝুঁকি বিবেচনায় লাল, হলুদ এবং সবুজ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা ও তা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ। জনগণের ক্ষমতা আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলা সিভিল সার্জনের কাছে বিষয়টি অর্পণ করা হয়। এবং বলা হয় তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সিভিল প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন।
রেড জোনে যেসব বিধি-নিষেধ উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো:
- স্বাস্থ্যবিধি মেনে বর্ধিত সময়ে কৃষি কাজ করা যাবে। গ্রামাঞ্চলে কলকারখানা ও কৃষিপণ্য উৎপাদন কারখানায় কাজ করা যাবে। তবে শহরাঞ্চলে সব বন্ধ থাকবে। বাসা থেকেই অফিসের কাজ করতে হবে।
- কোন ধরনের জনসমাবেশ করা যাবে না। কেবল অসুস্থ ব্যক্তি হাসপাতালে যেতে পারবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে পারবেন। রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, ট্যাক্সি বা নিজস্ব গাড়ি চলাচল করবে না।
- সড়কপথ, নদীপথ ও রেলপথে জোনের ভেতরে কোনো যান চলাচল করবে না। তবে রাতে জোনের ভেতরে ও বাইরে মালবাহী নৌযান ও জাহাজ চলাচল করতে পারবে।
- প্রত্যেক এলাকায় সীমিত পরিমাণে প্রবেশ ও বহিরাগমন পয়েন্ট নির্ধারণ করে কঠোরভাবে জনগণের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত মুদি দোকান ও ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। রেস্টুরেন্ট ও খাবার দোকানে শুধু হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু থাকবে। জরুরি প্রয়োজন হলেই বাজারে যাওয়া যাবে। তবে শপিংমল, সিনেমা হল, জিম/স্পোর্টস কমপ্লেক্স ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
- আর্থিক লেনদেন বিষয়ক কার্যক্রম, যেমন টাকা জমাদান/উত্তোলন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেবল এটিএমের মাধ্যমে করা যাবে। তবে সীমিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।
- এলাকার রোগীদের পর্যাপ্ত কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করা হবে। শনাক্ত রোগীরা হোম আইসোলেশন বা প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে থাকবেন।
- শুধু মসজিদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মসজিদ/উপাসনালয়ে শারীরিক দূরত্ব রেখে ইবাদত করতে পারবেন।
- সাধারণভাবে রেড জোন ২১ দিনের জন্য বলবৎ হবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে রেড জোন পরিবর্তন করা হবে।
এছাড়া রেড জোনসহ বাংলাদেশের সব অঞ্চলে সাধারণ নিয়মাবলী পালন করতে হবে। যেমন: সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। হাত ধোয়া, জীবাণুমুক্তকরণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
- করোনা রোগ/সংক্রমণ শনাক্তকরণ, তাদের আইসোলেশন ও চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
- সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।
- স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, হাসপাতাল ও জরুরি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। অসুস্থ ব্যক্তি পরিবহনকারী যান/ব্যক্তিগত গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে চলাচল করবে।
- সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টার পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
এসব কার্যক্রমের তদারকির জন্য কার্যকরী সামাজিক সম্পৃক্ততা এবং মাঠকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১৫ জুন জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করতে হবে।
রেড জোন বাস্তবায়নকালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সবার প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবাসহ অন্যান্য সুবিধা-অসুবিধার দিকে খেয়াল রাখবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।