রাজিব আহমেদ, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ যুগের পর যুগ জন প্রতিনিধিদের কাছে ধ্বর্ণা দিয়েও পায়ে হাটার একটা রাস্তা পায়নি এই গ্রামের ২ হাজার বাসিন্দা। উপায়ন্তর না দেখে নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই পরিবর্তনে টুপড়ি ও কোঁদাল হাতে মাঠে নেমেছেন শিশু, কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধ সকল বয়সী গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা। কয়েকদিনের প্রচেষ্টায় তৈরি করে ফেললেন ১ কিলোমিটার পায়ে হাটার মাটির রাস্তা।
ঘটনাটি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের কাকুরিয়া উত্তর পাড়ার। গ্রামটিতে প্রায় ২ হাজার মানুষের বসবাস, বাড়ি থেকে বের হয়ে ১ কিঃমিঃ জমির উপর দিয়ে পায়ে হেটে তাদের পাকা সড়কে উঠতে হয়। গ্রামটির অবস্থান হুরাস্বাগর শাখা নদীর ওপারে হওয়ায় সরকারের কোন উন্নয়ন কাজের ছোয়া এখানে লাগেনি।
রাস্তা না থাকার কারণে কোমলমতি শিশুরা স্বাভাবিকভাবে স্কুলে যেতে পারে না। এ কারণে অনেক শিশুর শিক্ষা জীবন নষ্টের উপক্রম হয়। অসুস্থ রুগীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য মাচায় বেধে ঘারে তুলে নিয়ে যেতে হয়। সামান্য বৃষ্টি হলে পিচ্ছিল ও কাঁদার কারণে হাটার সময় পড়ে গিয়ে জামা কাপড় নষ্ট হয়ে যায়, আবার অনেক সময় গুরুতর আহতও হতে হয়। তারা সরকারের কাছে এই অভিষাপময় জীবন ও বন্দিদশা থেকে পরিত্রাণ চায়।
গ্রামের বয়স্ক বাসিন্দা শুকুর মোল্লা (৭০) বলেন, জন্মের পর থেকে আমরা এই কষ্ট করছি। রাস্তা না থাকার কারণে আমাদের সাথে কেউ আত্মীয়তা করতে চায়না, শিশুরাও স্কুলে যেতে চায়না। এখন আমরা বৃদ্ধরাও এই বয়সে এতো পথ পায়ে হেটে কোথাও যেতে পারিনা। মৃত্যুর আগে যদি আমার উত্তরসূরীদের জন্য একটা পাকা রাস্তা পেতাম তাহলে শান্তি পেতাম।
এই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম সরকার (৪০) জানান, চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে ঘুরে ঘুরেও আমরা রাস্তা পাইনি। তাই গ্রামের সবাই সম্মিলিতভাবে দিনে এক বেলা কাজ করে পায়ে হাটার রাস্তা তৈরী করেছি। এখনও যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা না পাই তবে এই মাটির রাস্তা বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যাবে।
এই বিষয়ে পোরজনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মুকুল বলেন, এই গ্রামের বাসিন্দারা আমার কাছে এসেছিলো। রাস্তাটি খুবই প্রয়োজন তবে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় এখন পর্যন্ত রাস্তাটি করা যায়নি।
এই বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোঃ শামসুজ্জোহা বলেন, গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণ করে সরকারের উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা করেছে এজন্য তাদের ধন্যবাদ। খুব দ্রুত কাকুরিয়া উত্তর পাড়ার এই মাটির রাস্তাটি পাকা করণের ব্যাবস্থা করা হবে।