খবর৭১ঃ দ্রুত ঢাকা শহরকে কড়াকড়িভাবে লকডাউন ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের ওপর আজ রবিবার (১৪ জুন) শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামীকাল সোমবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
এদিকে শুনানিতে রাস্তাঘাটে, হাটবাজারে জনসমাগম দেখে আদালত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছেন, হাট–বাজারে যেভাবে লোক সমাগম দেখা যাচ্ছে, তাতে তো মনে হয় না যে দেশে মহামারি আছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল ইসলামের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ গত ১১ জুন এ রিট আবেদন দাখিল করেন। আবেদনকারীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
রিট আবেদনে লকডাউন সময়ে ঢাকার দুই মেয়র যাতে কাউন্সিলদের মাধ্যমে ঢাকার প্রত্যেক এলাকায় গরিবদের মাঝে খাবার এবং ওষুধ সরবরাহ করেন তার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও মুমূর্ষু রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ‘হাই ফ্রো নেজাল অক্সিজেন ক্যানুলা‘ সংগ্রহের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে কভিড–১৯ সংক্রমিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যথাযথ চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন সরবরাহের সার্বিক সুবিধাসহ আলাদা হাসপাতাল ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
জনস্বার্থে করা রিট আবেদনে ঢাকার দুই মেয়র, মন্ত্রিপরিষদ, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়, স্বাস্থ্য ও অর্থ সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) ও অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন), র্যাব মহাপরিচালক ও ঢাকার পুলিশ কমিশনারকে বিবাদী করা হয়েছে।
শুনানিতে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কভিট–১৯ প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমাদের দেশে আদালতের নির্দেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি উপদেষ্টা কমিটি ও ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি জাতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। জাতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা শহর লকডাউন ঘোষণার সুপারিশ করেছে। কিন্তু সরকার এখনও এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে অনেক মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে এবং বাড়তে পারে মৃত্যুর সংখ্যাও। মানুষের জীবন বাঁচাতে সংবিধানের ১০২ নম্বর অনুচ্ছেদের দেওয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করে ঢাকা শহর লকডাউন ঘোষণার জন্য আদালত আদেশ দিতে পারেন।
এ ছাড়া মুমুর্ষ রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ‘হাই ফ্রো নেজাল অক্সিজেন ক্যানুলা‘ সংগ্রহ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত নির্দিষ্ট হাসপাতালের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
আবেদনের বিরোধিতা করে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, সরকার করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কাজ করছে। যে এলাকায় লকডাউন করা প্রয়োজন, সেইসব এলাকা লকডাউন করা হচ্ছে। আমাদের সরকার যে পদ্ধতি নিয়েছে চীন সরকারও একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। সুতরাং এই রিট আবেদনের প্রয়োজনীয়তা নেই।
এসময় আদালত বলেন, হাট বাজারে যেভাবে লোক সমাগম দেখা যাচ্ছে, তাতে তো মনে হয় না দেশে মহামারি আছে। আদালত সবাইকে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করার অনুরোধ জানান।
রিট আবেদনে বলা হয়, বার বার পরামর্শ ও তাগিদ দেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনীয় একটি চিকিৎসা–কৌশল, ‘হাই ফ্লো নেজাল অক্সিজেন ক্যানুলা‘র ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি। তাই জাতীয় কমিটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কালক্ষেপণ না করে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য ‘হাই ফ্লো নেজাল অক্সিজেন ক্যানুলা‘র জোগান নিশ্চিত করার জোরালো তাগিদ দিয়েছে। ‘হাই ফ্লো নেজাল অক্সিজেন ক্যানুলা‘ সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু তারা তা করছে না। ফলে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে।
আবেদনে আরো বলা হয়, ব্যাপক হারে চিকিৎসকরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। তাঁদের চিকিৎসা–সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এ কারণে কভিড–১৯ সংক্রমিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যথাযথ চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন সরবরাহের সার্বিক সুবিধাসহ আলাদা হাসপাতাল ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাদের জন্য ‘গ্যাসট্রোলিভার হসপিটাল‘র বরাদ্দের পক্ষে সর্বসম্মত প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।
ওই হাসপাতাল পরিচালনায় এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের কোনো ঘাটতি থাকলে তা দ্রুত পূরণের পক্ষে মতামত গ্রহণ করা হয়। এই সিদ্ধান্ত যাতে দ্রুত বাস্তবায়িত হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয় রিট আবেদনে।