শেরপুরের উন্নয়নে আগামী অর্থ বছরে বিশেষ বরাদ্ধের দাবী জেলাবাসীর

0
516
শেরপুরের উন্নয়নে আগামী অর্থ বছরে বিশেষ বরাদ্ধের দাবী জেলাবাসীর

খবর৭১ঃ

শেরপুর থেকে আবু হানিফঃ গারো পাহাড় অধ্যুষিত শেরপুর জেলা। সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও সেই তুলনায় খুব একটা উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ঘেঁষা এই জেলায়। তাই আগামী ২০২০-২১ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট ঘোষনার পর এবং অর্থবছরের শুরুর আগেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জেলা ব্যান্ডিং পর্যটনের উন্নয়ন খাতে বিশেষ বরাদ্দ চায় শেরপুরবাসী।

শেরপুর জেলা ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ১হাজার ৩৬৩ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জেলায় জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬১০ জন। কোচ, হাজং, বানাই, হদি, গারোসহ নানা জাতিগোষ্ঠির পর্যটন অধুষিত এ জেলার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। জেলাব্যান্ডিং তুলশিমালা সুগন্ধি চালসহ নানা কৃষিপণ্য জেলার বাইরে পাঠাতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় রাস্তা-ঘাট, রেলপথ নির্মাণ, শিক্ষার জন্য মেডিকেল কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবী এখন গণমানুষের দাবীতে পরিনত হয়েছে। তাই আগামী অর্থবছরে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে জেলার দাবীগুলো বাস্তবায়ন করার জোর দাবী জেলাবাসীর। শেরপুরের অর্থনীতি বহুলাংশে ধানের চাতালের উপর নির্ভরশীল। জেলার ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য নির্ধারিত হয়েছে সুগন্ধি তুলসীমালা চাল। প্রতি বছরই ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে এ জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান রপ্তানি করা হয়। এছাড়া সীমান্তের গারো পাহাড় ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় প্রচুর সবজি উৎপাদন করে এখানকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু সারা দেশের সাথে একমাত্র সড়কপথেই এসব পণ্য আনা নেয়ার ফলে অনেক সময়ই সঠিক দাম পায় না এখানকার কৃষকরা। নৌপথের সুযোগ না থাকায় সড়ক পথের পাশাপাশি রেল পথের দাবী এ জেলার মানুষের প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে জেলা সদর হাসপাতালকে আড়াইশো শয্যায় উন্নীত করা হলেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি এর কার্যক্রম। আইসিইউ, ইআরটিসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানে ব্যর্থ এ হাসপাতাল। তাই ১৫লাখ মানুষের সেবা দিতে হিমশিম খায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রতিদিনই অসংখ্য রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হয় পাশর্^বর্তী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা পেতে স্বাস্থ্য খাতেও বিশেষ বরাদ্দের দাবী শেরপুরের মানুষের। শেরপুরে মেডিক্যাল কলেজ করার কথা থাকলেও রাজনৈতিক বিরোধের কারণে তা শেরপুর বাসীর ভাগ্যে জুটেনি। জেলার ১৫লাখ মানুষের জন্য একমাত্র শীর্ষ বিদ্যাপীঠ শেরপুর সরকারীবিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। তাই শেরপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ^বিদ্যালয়। ইতোমধ্যে এ দাবীতে একাধিকবার মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের পরও তেমন কোন সাড়া পায়নি জেলাবাসী। কারিগরি শিক্ষায় সীমান্তবর্তী জেলাকে এগিয়ে নিতে একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য শেরপুরের শিক্ষাখাত নিয়ে বিশেষ বরাদ্দ চান স্থানীয়রা। সংস্কৃতিকর্মী আব্দুল মমিন বলেন, ‘শেরপুরে গারো, কোচ, হদিসহ বিভিন্ন আদিবাসীদের বাস রয়েছে। তাদের সবারই নিজস্ব ভাষা ও সংষ্কৃতি রয়েছে। যা চর্চার অভাবে আধুনিকতার আগ্রাসনে বিলিন হওয়ার পথে। আমাদের সমৃদ্ধ এই সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে এই জনপদে একটি কালচারাল ভিলেজ স্থাপনের দাবী জানাই।’ নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ’র আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পর্যটন সমৃদ্ধ শেরপুরে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। শেরপুরের ব্র্যান্ডিং পর্যটন নিয়ে হলেও পর্যটন খাতে সরকারী বেসরকারী তেমন উদ্যোগ নেই।

তাই পর্যটনকে সমৃদ্ধ করতে রেলপথের পাশাপশি পর্যটন খাতে নজর দেয়া জরুরী।’ শেরপুর মডেল গালর্স ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ তপন সারওয়ার বলেন, ‘গারো পাহাড়ের পাদ দেশে এই শেরপুরে একটি মেডিকেল কলেজ ও পূর্ণাঙ্গ বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন জরুরী। এবারের বাজেটে এই বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার অনুরোধ করছি।’ শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শরিফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো: মেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘শেরপুর একটি অনগ্রসর জেলা। আমরা অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত। রেল লাইন, মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় শেরপুরের মানুষের প্রাণের দাবী। এছাড়া সীমান্তের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য কালচারাল ভিলেজ স্থাপন জরুরী। তাই আগামী অর্থ বছরে যাতে এই বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়, সেই প্রত্যাশা করছি।’ শেরপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান রওশন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে শেরপুরের অনেক উন্নয়ন হলেও পাশর্^বর্তী জেলাগুলোর তুলনায় শেরপুর অনেক পিছিয়ে আছে। ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচের কথা মাথায় রেখে যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে শেরপুরে রেল লাইন স্থাপন করা হয়, সে দাবী জানাচ্ছি।

এজন্য আসন্ন বাজেটে এই বিষয়ে বিশেষ বরাদ্দ থাকবে বলেও প্রত্যাশা করছি।’ এসব বিষয়ে কথা হয়েছে অনেক সাধারণ মানুষের সাথেও, তারা বলেছেন, আমরা শেরপুরের উন্নয়ন চাই। রাজনৈতিক মাঠে যে যে অবস্থানেই থাকুন না কেন, শেরপুর জেলার উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এটাই সাধারণ মানুষের কামনা। শেরপুরকে মডেল শেরপুর হিসেবেও দেখতে চান। কৃষি খাতে উজ্জল সম্ভাবনা থাক সত্বেও এখানে আজো কৃষি উন্নয়নের লক্ষে গড়ে উঠেনি সরকারী বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। এজন্য সরকারী উদ্যোগ ও অর্থ বরাদ্ধ চান সাধারণ মানুষ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here