খবর৭১ঃ প্রস্তাবিত বাজেটকে অন্তঃসারশূন্য কল্পনাপ্রসূত কথার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা” শিরোনামের এই বাজেট প্রকৃত অর্থে একটি অন্তঃসারশূন্য কল্পনাপ্রসূত কথার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছুই নয়। বাজেট জনবান্ধব হয়নি। বর্তমান সরকারের কাছ থেকে অবশ্য এর বেশি কিছু আশা করেও লাভ নেই, কারণ জনগণের কাছে এদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।
শুক্রবার বিকালে নিজ বাসভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে দলের পক্ষে ব্রিফিংয়ে বাজেট নিয়ে দলের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, বরাদ্দ যাই হোক না কেন প্রয়োজন স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত ব্যবহার। সে বিষয়ে বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রকৃত অর্থে কোন গঠনমূলক ব্যবস্থা কিংবা সংস্কার প্রস্তাবও নেয়া হয়নি। এমনকি যেসব প্রকল্প নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে সেসব প্রকল্পগুলোকেই সরকারের বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে দেখানো হয়েছে। অথচ পরিবহন খাত ও বিদ্যুৎ খাতসহ এমন অনেক খাতে অনেক বেশি পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা এ মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারি ভাষ্য মতে, বর্তমানে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ২০ হাজার ২৭৯ মেগাওয়াট। তাই এ অসময়ে তোড়জোড় করে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দের কোনো দরকার ছিল না। ১২০০ মেগাওয়াট রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকায় দেশের সবচেয়ে একক ব্যয়বহুল চাপযুক্ত জল-চুক্তি প্রকল্প যা রাশিয়ান এক কোম্পানি কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কিছু সময়ের জন্য পিছিয়ে দিয়ে ঐ অর্থ স্বাস্থ্য খাতসহ কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করা যেত। তা করা হয়নি কারণ রূপপুর কেন্দ্রের দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ করতে চায়নি সরকার’।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বলছে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫%। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের “গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস ২০২০ শিরোনামের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি ১.৬% নেমে আসবে এবং ২০২০-২১ বছরে হবে মাত্র ১ শতাংশ”।
অর্থমন্ত্রী এ বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করেছেন ৮.২%। আমদানি, রপ্তানি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি macroeconomic indicator গুলো আলোচনা করলেই স্পষ্ট যে ৮.২% প্রবৃদ্ধি অর্জন নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত। বিনিয়োগ দরকার ৩২-৩৪ শতাংশ। যা কঠিন এবং অসম্ভব। জিডিপি ও রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা দৃশ্যমানভাবেই প্রতারণার শামিল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থমন্ত্রী বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলেছেন। অথচ প্রবাসীদের destination হিসেবে পরিচিত প্রতিটি দেশই করোনা আক্রান্ত হয়ে মন্দাকবলিত। তাছাড়া কর্মহীন প্রবাসীদের দেশে পুনর্বাসন ও আত্মনির্ভরশীল করে তোলার কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই এ বাজেটে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাজেটে পোশাক খাতের অস্থিরতা কাটানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে গার্মেন্টসগুলো ফিরে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু এ সময়টুকু টিকে থাকার মতো সাপোর্ট তাদের দিতেই হবে। তা না হলে পোশাক খাত মুখ থুবড়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। তবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে কেবলমাত্র গার্মেন্টস খাতের ওপর ভরসা করলে চলবে না। আমাদের অর্থনীতিকে ডাইভার্সিফাই করতে হবে। কিন্তু সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা প্রস্তাবিত বাজেটে নেই।
তিনি বলেন, জাতি আশা করেছিল এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেন। এছাড়া করোনা মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হলো জিডিপির মাত্র ১.৩% মাত্র। অথচ স্বাস্থ্য খাতে আমরা জিডিপির ৫% বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিলাম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর চেয়ে অধিক অর্থ absorb করতে পারবে না এমন খোঁড়া যুক্তিতে স্বাস্থ্য খাতে অধিক বরাদ্দ দেয়া হয়নি বলে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করাই ছিল প্রত্যাশিত। স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির ৫ ভাগ বরাদ্দ দেয়া দরকার ছিল। কিন্তু জিডিপির মাত্র ১.৩ ভাগ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে ভেঙে পড়েছে। মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না, চিকিৎসার জন্য মানুষ ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, সারা দেশে আইসিইউ সম্বলিত কোনো অ্যাম্বুলেন্স নাই। অক্সিজেন ও অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। এজন্য স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ আরও অনেক বেশি দেয়ার দরকার ছিল।
প্রস্তাবিত বাজেটকে সাদামাটা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব দাবি করে বলেন, বাজেটে মানুষের জীবন ও জীবিকার যে বিষয়টা গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন ছিল তার কোনোটিই করেনি, যা করেছে তা তাদের কমিশনের বিষয়টি সামনে নিয়েই করেছে। সরকারের লক্ষ্য একটাই কী করে তাদের লোকগুলোকে তুষ্ট করবে, কী করে তাদের লোকজনের পকেট ভারী করবে।