খবর৭১ঃ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭০৯ জনে। এছাড়া এ সময়ে নতুন শনাক্তের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৯৫ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত হলেন ৫৫ হাজার ১৪০ জন। আর নতুন সুস্থ হয়েছেন ৪৭০ জন।
আজ বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে করোনাভাইরাস সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০টি ল্যাবে এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ১০৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ১২ হাজার ৫১০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর আগে গতকাল (২জুন) ১৪ হাজার ৯৫০ জনের নমুনা নিয়ে ১২ হাজার ৪০৭ জনের পরীক্ষা করা হয়।
নাসিমা জানান, নতুন পরীক্ষায় ২ হাজার ৬৯৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এটি এ যাবতকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গতকাল (২জুন) এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯১১ জনের করোনা শনাক্তের কথা জানানো হয়। তার আগে ১ জুন ২ হাজার ৩৮১ জনের, গত ৩১ মে ২ হাজার ৫৪৫ জনের, ২৯ মে ২ হাজার ৫২৩ জনের, ২৮ মে ২ হাজার ২৯ জন, ২৫ মে ১ হাজার ৯৭৫ জন, ২৩ মে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮৭৩ জন, ২১ মে ১ হাজার ৭৭৩ জনের ও ২০ মে ১ হাজার ৬১৭ জনের দেহে করোনা শনাক্তের কথা জানানো হয়েছিল। এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫৮৩ জনের করোনা পরীক্ষা করে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৫ হাজার ১৪০ জনে।
এছাড়া এই সময়ে মৃত্যু বরণ করেছেন ৩৭ জন। এর আগে গতকালও (২জুন) ৩৭ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল। তার আগে গত ৩১ মে একদিনে সর্বোচ্চ ৪০ জন মৃত্যুর কথা জানানো হয়। গত ৩০ মে ২৮ জন, ২২ মে ২৪ জনের, গত ১৮, ১৯ ও ২৫ মে একদিনে সর্বোচ্চ ২১ জন ও ২২ মে ২২ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল। এ নিয়ে মোট মৃত্যু ৭৪৬ জনের। নতুন মৃতদের মধ্যে পুরুষ ২৮ জন ও নারী ৯ জন।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ৪৭০ জন। এ নিয়ে মোট ১১ হাজার ৫৯০ জন সুস্থ হয়েছেন।
ব্রিফিংয়ের করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক নাসিমা বলেন, তরল খাবার, কুসুম গরম পানি ও আদা চা পান করবেন। সম্ভব হলে মৌসুমী ফল খাবেন ও ফুসফুসের ব্যায়াম করবেন। এ সময় ধূমপান ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এটি ফুসফুসের কার্যকারীতা নষ্ট করে দেয়।
এ ছাড়া, মৃতদেহ দাফনের জন্য আলাদা কবরস্থানের প্রয়োজন নেই বলেও জানান নাসিমা। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে মৃতদেহে করোনাভাইরাসের কার্যকারিতা ৩ ঘণ্টার বেশি থাকে না। তাই নিজ নিজ ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে সৎকার করে পারিবারিক কবরস্থানেও মরদেহ দাফন করা যাবে।
চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সেদিন তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছিল আইইডিসিআর।
এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার।
ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়ানো হয় সেই ছুটি, যা এখনও অব্যাহত আছে। ৭ম দফায় বাড়ানো ছুটি চলে ৩০ মে পর্যন্ত। ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি নেই। তাই অফিস আদালতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সরঞ্জামাদি রাখা ও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপর গুরত্ব দেন ডাক্তার নাসিমা।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত একদিনে বিশ্বে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখেরও বেশি। গতকাল সারাবিশ্বে এক লাখ ১৯ হাজার ৪৬৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৪৯৬৪ জন। একই সময়ে এক লাখ ৭ হাজার ৬৫ জন সুস্থ হওয়ায় মোট সুস্থ হয়েছেন ৩০ লাখ ১০ হাজার ৪৮৩ জন।
তবে, আক্রান্ত ও নিহতের সংখ্যায় সবার ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ৮১ হাজার ২০৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৫৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ৪৫ হাজার ৯৭৪ জন।
আক্রান্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৫৮ হাজার ২৩৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩১ হাজার ৩০৯ জনের।
রাশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ২৩ হাজার ৭৪১ জন, মৃত্যু ৫০৩৭ জনের। স্পেনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৮৭ হাজার ১২ জন এবং মৃত্যু ২৭ হাজার ১২৭ জনের।
মৃত্যুর দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রিটেনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৯ হাজার ৩৬৯ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৮৫ জন। এছাড়া ইতালিতে মারা গেছেন ৩৩ হাজার ৫৩০ জন।