খবর৭১ঃ
এ বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্তের পর সরকারিভাবে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, যা পরে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে।
অবশেষে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা সর্বমোট ৬৬ দিনের ছুটির অবসান ঘটেছে গত ৩০ মে। এর ফলে রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ সাপেক্ষে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
একই সঙ্গে দেশের সব সমুদ্র, বিমান ও স্থলবন্দরসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হয়েছে শেয়ারবাজারসহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও শুরু করেছে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম। পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি সচল করতে সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে হাটবাজার।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী বহন সাপেক্ষে চলাচল করবে বাস ও অভ্যন্তরীণ বিমান।
অবশ্য এক্ষেত্রে বিদ্যমান ভাড়ার সঙ্গে ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া যুক্ত হবে বলে জানা গেছে। তবে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রির বিধান রেখে বিদ্যমান ভাড়ায়ই আপাতত ১৬টি আন্তঃনগর ট্রেনের চলাচল শুরু হয়েছে এবং ৩ জুন থেকে ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়বে।
এছাড়া নদীপথও উন্মুক্ত করা হয়েছে; লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে সারা দেশে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক জনসাধারণের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করার কথা বলা হলেও যাতায়াত ও কর্মক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে বৈকি!
মূলত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টিকে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যাবে।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের মানুষের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সাধারণ শিষ্টাচার মেনে চলাসহ সচেতনতার ব্যাপক অভাব রয়েছে।
এছাড়া ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি, প্রথমবার ছুটি ঘোষণার পরপরই সাধারণ মানুষ বাস, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনগুলোয় হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। সবকিছু উন্মুক্ত করার পর যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কী?
মানুষজন যদি তাদের পূর্বের অভ্যাস, আচরণ ও কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেয় তাহলে তা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ও সংক্রমণে সহায়ক হবে, এ কথা বলাই বাহুল্য।
মনে রাখা দরকার, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে বারবার সাবানপানি দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে স্পর্শ না করা, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলাসহ অন্য যে বিষয়টির কথা বারবার মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে, তা হল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।
সামাজিক দূরত্বকে গুরুত্ব দেয়ার কারণ হল, এটি সংক্রামক রোগ বিস্তার প্রতিরোধের জন্য ওষুধবিহীন এক পদক্ষেপ। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, আক্রান্ত ব্যক্তি যেন অপরের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে অর্থাৎ রোগ সংবহন কমানো; সর্বোপরি মৃত্যুহার কমানো।
সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পক্ষ থেকে রোগের সঞ্চালন ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য মানুষের মধ্যকার সংস্পর্শের ঘটনা কমানোর পদ্ধতিকে সামাজিক দূরত্ব স্থাপন হিসেবে বর্ণনা করে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর সময় সমাবেশজনিত ঘটনা পরিহার, গণসমাগম এড়ানো এবং প্রায় ৬ ফুট বা ২ মিটার দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়টি আমরা সঠিকভাবে পরিপালন করতে পারব কিনা, এটাই হল বড় প্রশ্ন। এজন্য জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি ও সাধারণ শিষ্টাচার মেনে চলার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ব্যাপকভাবে সচেতন করা জরুরি। সরকার যদিও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তবে এতে আমরা কতটুকু সচেতন হয়েছি- এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ব্যাপারে সরকার ও জনসাধারণকে স্বীয় কর্তব্য নির্ধারণ ও পরিপালন করতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করতে পারে, যা থেকে উদ্ধার পাওয়া হয়তো কঠিন হবে।