রাজিব আহমেদ, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: কথা ছিল স্বপ্নের মত লালিত পাকা ধান ঘরে উঠলে ছেলে মেয়ে নিয়ে সারাবছর খেয়ে পরে বেঁচে থাকবেন বিধবা রঞ্জিদা। কথা ছিল কয়েক মাসের সাধনায় অনেক ঘামে তিল তিল করে তৈরি করা সোনালি ধান ঘরে তুলে নতুন ফসলের উৎসবে শামিল হবেন কৃষক মহাম।
কিন্তু কৃষকের সমস্ত স্বপ্ন বাঁধ ভাঙ্গা থৈ থৈ পানিতে তলিয়ে দিল আগাম বর্ষা। উজানে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢল আর অর্তিবর্ষণে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার নন্দলালপুর হুরাসাগর নদীর উপর নির্মিত ৫০ মিটার বাধ ভেঙ্গে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির পাকা ও আধা পাকা বোর ধান গভীর পানির নীচে তলিয়ে গেছে।
গত শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ বাঁধ ভাঙ্গার পর পানির প্রবল চাপে বিলের মধ্যেকার পাকা ধান প্রায় তিরিশ ফিট পানির নীচে তলিয়ে যায়। অপরদিকে বিলের উপরে দিগন্ত জোড়া পাকা ধানের ক্ষেতে বুক পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে সব। কারো কারো ধান কেটে মাড়াই করার পর ওখানেই রেখে দেওয়ায় সেগুলোও পানির গভীরে হারিয়ে গেছে। হঠাৎ বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে জমিতে অনেক পানি হওয়ায় কৃষকেরা ধান কাটতে পারেছন না।
একদিকে থৈথৈ পানি অন্যদিকে লোকবল না থাকায় কৃষকের সোনালী স্বপ্ন পানিতেই হাবুডুবু খাচ্ছে। এতে করে দু-একদিন পরে পাকা ধানে পচন ধরে যেতে পারে। যে কারণে কৃষকের ফসলী জমির ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। অথচ এবছর ফলন ভাল হাওয়ায় কৃষকেরা স্বপ্ন দেখছিলেন বাম্পার ফলন ঘরে তুলবেন। কিন্তু ধান পাকার পূর্বেই হঠাৎ করে উজানে সৃষ্ট বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল চাপে বাঁধ ভেঙে চোখের সামইে কৃষকের সেই স্বপ্ন তলিয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার নন্দলালপুর গ্রামের হুরাসাগর নদীর তীর ঘেষে বিশাল ফসলের মাঠ হঠাৎ বর্ষার অথৈ পানিতে ডুবে আছে। জমিতে নৌকা নিয়ে ২-৩ ফুট পানির মধ্যে ধান কাটছেন কেউ কেউ। এছাড়াও কোন কোন ক্ষেতের কাচা ধান পানিতে প্রায় ২-৩ ফুট তলিয়ে রয়েছে লোা না থাকায় কাটতে পারছেন না। এই বর্ষার ফলে কৃষকের দুই থেকে আড়াই হাজার বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। এর ফলে কৃষকের প্রায় ২হাজার ৪শত মেট্রিকটন ধান পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে প্রায় চার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের নন্দলালপুর গ্রামের কৃষক শাহজাহান শেখ জানান, এ বার ধান ভালো হওয়ায় আশা করেছিলাম বাম্পার ফসল ঘরে তুলব, কিন্তুু চোখের সামনে সকল ধান পানির নিচে চলে গেলো।
কৃষক রফিকুল ইসলাম রওশন বলেন, আমি ৮ বিঘা ধান বুনেছিলাম। ক্ষেতে ধান পেকেও গিয়েছিল। দুই-এক দিনের মধ্যে কেটে ঘরে তুলতাম। কিন্তু বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় জমির সব ধান গভীর পানির নীচে তলিয়ে গেলো চোখের সামনে।
বিধবা রঞ্জিদা বেগম জানান, তিনি সারা বছর খাওয়ার জন্য মাত্র দুই বিঘা জমিতে ধান বুনেছিলেন। কিন্তু পাঁকার আগেই গহীন জলে তলিয়ে গেছে সবুজ ধানের ক্ষেত।
তাদের ভাষায় ফলন ভাল হওয়ায় স্বপ্ন ছিল বাম্পার ফলন ঘরে তুলবেন। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে চোখের সামনেই পাকা ও আধাপাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে একই গ্রামের কৃষক মহামের ১০ বিঘা ধান পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় গভীর শোকে বার বার অচেতন হয়ে পড়ছেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুস ছালামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’ কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আমরা এসেছি। সবকিছু দেখার পর নির্দিষ্ট করে বলা যাবে কতটা ক্ষতি হয়েছে কৃষকের।