খবর৭১ঃ
কোনো বস্তু বা পৃষ্ঠতল থেকে করোনাভাইরাস সহজে ছড়ায় না, বরং মূলত মানুষ থেকে মানুষেই রোগটি ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা-সিডিসি।
এদিকে ভারতেও করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যেই প্রাণীর শরীরে ভ্যাকসিনের ‘প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ শুরু করবে দেশটি।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, সিডিসি তাদের ওয়েবসাইটে ‘কীভাবে কোভিড-১৯ ছড়ায়’ এ সম্পর্কিত নির্দেশনা এ মাসে হালনাগাদ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভাইরাসটি একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষে সহজেই ছড়াতে পারে। কোন উৎসগুলো রোগটি ছড়ানোর ‘মূল ঝুঁকি নয়’ তা স্পষ্ট করা হয়েছে নির্দেশনায়।
সিডিসি বলছে, ভাইরাসের উপস্থিতি আছে এমন বস্তু বা তল স্পর্শ করাটা রোগটি ছড়িয়ে পড়ার ‘উল্লেখযোগ্য কারণ নয়’।
সিডিসির একজন মুখপাত্র ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষার পর তারা করোনাভাইরাস ছড়ানোর প্রক্রিয়া নিয়ে নির্দেশনাগুলো হালনাগাদ করেছেন। ভাইরাসের উপস্থিতি আছে এমন পৃষ্ঠতল বা বস্তু স্পর্শ করার পর কেউ নিজের মুখ, নাক ও চোখ স্পর্শ করলে হয়তো আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু এগুলো ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে না।
ওয়েবসাইটের তথ্য হালনাগাদ করা নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টকে ওই কর্মকর্তা বলেন, সংক্রমণ বিষয়ে আমাদের বক্তব্যে পরিবর্তন আসেনি। আমরা বলতে চেয়েছি, কোভিড-১৯ প্রধানত মানুষের সঙ্গে মানুষের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য থেকেই ছড়ায়। কথা বলার সময় অথবা হাঁচি-কাশির সময় মুখ থেকে বের হওয়া অতিক্ষুদ্র জলকণার মাধ্যমে বাতাসে ভেসে কিছু দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে ভাইরাস। কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার কোনো উপসর্গ না থাকলেও ওই জলকণার মাধ্যমে ভাইরাসটি আরেকজনকে সংক্রমিত করতে পারে যদি তাদের মধ্যে দূরত্ব ৬ ফুটের কম থাকে। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, জেলখানা, জাহাজ এবং মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় অনেক মানুষ কাছাকাছি দূরত্বে থাকেন বলে এসব জায়গায় সহজেই এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তবে কোনোরকম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আর ব্যাখ্যা ছাড়াই সিডিসির ওয়েবসাইটের নির্দেশনা হালনাগাদ করা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেইলম্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের ভাইরোলজিস্ট অ্যানজেলা এল রাসমুসেন। তার মতে, এর ফলে কোনো কিছু হাতে স্পর্শ করার স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
ভারতে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা : আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই ভারতে প্রাণীর শরীরে করোনা প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিনের ‘প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ বা পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হবে।
শুক্রবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, ৩০টি দল এই মুহূর্তে করোনার প্রতিষেধক বানানোর দৌড়ে রয়েছে। যার মধ্যে ২০টি দল অনেকটাই এগিয়ে আছে। তবে সব পরীক্ষা শেষ করে বাণিজ্যিকভাবে ওই প্রতিষেধক বাজারে আসতে এখনও বছরখানেকের বেশি সময় লাগবে। বাজারে এলে প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী, তারপর বয়স্ক ব্যক্তি এবং যারা বিপদসীমায় রয়েছেন তাদের ওই প্রতিষেধক দেয়া হবে। তারপর বাকিদের।
ইতোমধ্যেই চীন, আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশে মানবদেহে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে। তা সত্ত্বেও ভারত ওই প্রতিষেধক তৈরির লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখ্য বিজ্ঞানবিষয়ক উপদেষ্টা কে বিজয় রাঘবন।
তিনি বলেন, সাধারণত প্রতিষেধক বানাতে দশ-বারো বছর সময় লাগে। আমরা তা কমিয়ে এক বছরের মধ্যে করার চেষ্টা করছি। একটি প্রতিষেধক আবিষ্কারের পর তা উন্নত করার কাজ চালু থাকে। সুতরাং যারা পিছিয়ে রয়েছে তাদের সামনেও সুযোগ রয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে প্রতিষেধক তৈরির কাজ করছেন বলে দাবি করেন রাঘবন।
রাঘবন বলেন, এখনও পর্যন্ত ভাইরাসের মূল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একই রয়েছে। বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি। জুলাইয়ের মধ্যে ভারতে প্রতিদিন পাঁচ লাখ করে পরীক্ষা কিট তৈরি হবে। সেক্ষেত্রে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করতে পারবে ভারত।