খবর৭১ঃ শর্তসাপেক্ষে আগামী ১ জুন থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়ানো হবে।
যেসব প্রতিষ্ঠান বা শিল্পকারখানা এখনও বন্ধ রয়েছে, সেগুলোর কার্যক্রমও চালু করা হবে।
গ্রামের হাটবাজারসহ অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউস, শহরের বাজার, দোকানপাট ও বিপণিবিতানগুলো খোলা রাখার সময়সীমা আরও বাড়ানো হবে।
অর্থাৎ স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মাধ্যমে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একই সঙ্গে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এবং কর্মীদের স্বাস্থ্য সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পর্যটন খাত এখনই উন্মুক্ত করা হবে না। সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আলোকে আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করার দিকে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে।
অন্যান্য খাতগুলোতেও ঈদের পরেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এর আওতায় রয়েছে- শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারখানা, প্রধান ও আঞ্চলিক অফিস, ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটর চ্যানেল, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠান, সব ধরনের বন্দরের কার্যক্রম, পণ্য খালাস ও পরিবহন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সব ধরনের কর্মকাণ্ড।
সূত্র জানায়, যেহেতু এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হবে, সে কারণে কর্মীদের যাতায়াতের জন্য সীমিত আকারে গণপরিবহন চালুর বিষয়টিও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে এ খাতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করা হবে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রাখার স্বার্থে এখন আর সব কিছু একসঙ্গে বন্ধ রাখা হবে না। করোনাভাইরাস বিস্তারের ঝুঁকি বিবেচনায় নিম্ন, মাঝারি ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণপ্রবণ এলাকাগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হবে।
নিম্নঝুঁকি এলাকায় সতর্কতার সঙ্গে সব কার্যক্রম চালানো হবে। মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি কার্যক্রম সীমিত করা হবে।
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লকডাউন বা আংশিক কার্যক্রম চালানো হবে। বাকি এলাকা খুলে দেয়া হবে। এ নীতিতে আগামী ১ জুন থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করার উদ্যোগ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ঈদের আগে সীমিত আকারে মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত হলেও অনেক বড় বড় মার্কেটই খুলেনি। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষের ওপরই ছেড়ে দিতে চায় সরকার। তবে যারা মার্কেট খুলবে তাদের এবং ক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় বন্ধ করে দেয়া হবে।
সরকার ঘোষিত লক্ষাধিক কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে।
বর্তমানে এদের কার্যক্রম সীমিত আকারে চলছে বলে প্যাকেজ বাস্তবায়নের কাজও চলছে ধীরগতিতে। কিন্তু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করতে দ্রুত প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে হবে।
এ কারণে আগামী ১ জুন থেকে সব ব্যাংকের শাখা খোলা রাখার সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে ব্যাংকিং সেবার সময়। একই সঙ্গে বাড়বে ব্যাংকিং সেবার পরিধি। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করার দিকে এগোচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখতে গ্রামে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গ্রামে ৮০ শতাংশ টাকার জোগান দেয় ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
আগামী ১ জুন থেকে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোও কাজ শুরু করবে আরও সক্রিয়ভাবে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) নির্দেশনা জারি করেছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের কাজই চালু করার নির্দেশনা দিয়েছে।
এদিকে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থায়নকারী সংস্থা পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সম্প্রতি পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি মেনে তাদের সহযোগী সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোর জন্য।
ইতোমধ্যে প্রায় সব ধরনের শিল্পকারখানা খোলা হয়েছে। যেগুলো এখনও খোলা হয়নি, সেগুলো ১ জুন থেকে খুলে দেয়া হবে।
গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গ্রামীণ হাটবাজার, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, তাঁত শিল্পসহ অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউস হিসেবে পরিচিতি (পণ্য উৎপাদন, দোকানপাট, পণ্যের সরবরাহ, খেয়াঘাট) সব ধরনের কার্যক্রম খুলে দেয়া হবে।
ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাসমান ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্য এনে ঢাকায় বিক্রি করে আবার চলে যেতেন। সেসব ব্যবসা এখন বন্ধ রয়েছে। এগুলো চালুর জন্য রেল ও গণপরিবহন সীমিত আকারে খোলার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দিতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সংশ্লিস্ট সব পক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আলোকে কোনো কৃষক যাতে আর্থিক সংকটের কারণে চাষাবাদ করা থেকে বিরত না থাকে সেজন্য দ্রুত ও সহজে ব্যাংক ঋণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আওতায় পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা আরও সহজ করা হবে।
দেশে এখনও করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটে যাচ্ছে। গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। এতে বিস্তার ঠেকানো যায়নি। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির থাকায় এখন সর্বত্রই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ কারণে সরকার এখন বিধিনিষেধ আরোপ করে সব খাতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই চালু করতে চায়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে একটি দিকনির্দেশনা পাঠিয়েছে।
এতে বাসা, অফিস, মার্কেট, হাটবাজার, দোকানপাট, শিল্পকারখানা, গণপরিবহন, পর্যটন স্পট, ব্যাংক, বীমা, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় এসব খাতের কোথায় কী করণীয় তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে খাতওয়ারি ৭ থেকে ১৭ দফা নির্দেশনা রয়েছে। এগুলো পালন করে কর্মকাণ্ড চালাতে হবে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- প্রতিষ্ঠান খোলার আগে মহামারী প্রতিরোধী সামগ্রী যেমন- মাস্ক, জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রী সংগ্রহ করতে হবে, তৈরি করতে হবে আপৎকালীন পরিকল্পনা। সবকিছু বিভিন্ন ইউনিটে ভাগ করে দিতে হবে, সব ইউনিটের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্মীদের প্রশিক্ষণকে জোরদার করতে বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, কর্মীদের স্বাস্থ্য সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রতিদিন কর্মীদের স্বাস্থ্যবিষয়ক অবস্থা নথিভুক্ত করে তা পর্যালোচনা করতে হবে।
এর মধ্যে কারও অসুস্থতার লক্ষণ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। সব প্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণকারী যন্ত্র স্থাপন করে তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু স্বাভাবিক তাপমাত্রার ব্যক্তিদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া যাবে।
সর্বসাধারণ ব্যবহার করে এমন সুবিধাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে; যেমন- লিফট, সিঁডির হাতল, দরজার হাতল, বিভিন্ন কাউন্টার, রোলার পেন, ক্যাশ কাউন্টার, এটিএম বুথ, জনসাধারণের বসার জায়গা ইত্যাদি।
জনসাধারণের চলাচলের এলাকায় যেমন- ব্যাংকের লবি, এলিভেটর এবং তথ্যকেন্দ্র কিছু সময় পরপর জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। কর্মস্থলে বা যে কোনো লাইনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যবসায়িক কাজে আসা মানুষের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, প্রতিদিনের ব্যবসায়িক কাজের জন্য অনলাইন সুবিধা গ্রহণে উৎসাহিত করার পরামর্শ দিতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।
এতে আরও বলা হয়, মাঝারি ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত করতে হবে। আগত লোকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঝুঁকি কম এমন এলাকায় সতর্কতার সঙ্গে কার্যক্রম চালাতে হবে। হাটবাজার নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।