সুদীপ্ত শামীম, রিপোর্টার:
গাইবান্ধায় গত দু’সপ্তাহে করোনা ভাইরাসে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হয়নি। জেলায় করোনার সংক্রমন আপাতত নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঈদ কেনাকাটায় মানুষের ভীড় বাড়িয়ে তুলছে নতুন করে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা।
সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন। অন্যকেও করোনার ঝুঁকিতে ফেলছেন। ভ্যাপসা গরমেও বিভিন্ন বিপণিবিতানে গাদাগাদি আর সংকুচিত জায়গায় ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত সাধারণ মানুষ। গাইবান্ধার বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানগুলোতে ঈদ কেনাকাটার ঢল নেমেছে। মানা হচ্ছে না কোনও স্বাস্থ্যবিধি। বেশিরভাগ ক্রেতা দর্শনার্থীর মধ্যে নেই করোনা সংক্রমণের ভয়। জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন ছাড়িয়ে এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঈদ কেনাকাটা। বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি। কেনাকাটা করতে প্রাপ্ত বয়স্করা যেমন আসছেন, তেমনি তাদের সাথে আসছে শিশুরাও। এতে শিশুদের মাঝেও বাড়ছে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি। ১৭ মে রবিবার দুপুরে গাইবান্ধা শহরের স্টেশন রোডে বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
সারি সারি দোকান আর মার্কেটের ভেতর গলিতে শত শত মানুষ ঠাসাঠাসি করে একজন আরেকজনের সাথে মিশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেনার চেয়ে দেখার মানুষই বেশি। প্রচণ্ড গরমেও মানুষের ভিড়। তবুও চলছে কেনাবেচা। ঈদের বাকি মাত্র কয়েকদিন। করোনার সামাজিক সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটির মধ্যে মার্কেট খোলার পর জমে উঠেছে ঈদ কেনাকাটা।
বিক্রেতারা জানান, মার্কেটে ক্রেতাদের চাপ একটু বেশিই। দোকানীদের টার্গেট ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা। অনেকেই ক্রেতাদের ডাকছেন। ক্রেতারাও দেখছেন। ফাঁকে ফাঁকে আবার কিনছেনও। আর ক্রেতারা বলছেন, ঝুঁকি থাকা সত্বেও ছেলেমেয়ে, পরিবার ও স্বজনদের জন্যই ঈদের নতুন কাপড় এবং অন্যান্য কেনাকাটা করছেন তারা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে কথা বলতে চাইলে মুখ ফিরিয়ে নেন অনেকেই।
শহরের স্টেশন রোডে একটি মার্কেটের গেটে দায়িত্বপালনরত এক কর্মী বলেন, মার্কেটে প্রবেশের আগে জীবাণুনাশক স্প্রে করা আর তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখারও অনুরোধও করা হচ্ছে। কিন্তু গরম আর মানুষের ভিড়ে সব উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে। কোনোকিছুই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
একজন বিক্রয়কর্মীর কাছে সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমরা দু’জন দোকানে আছি। তিন ফিট দূরত্ব বজায় রাখছি। ক্রেতাদেরও বলি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। কেউ মানেন আবার কেউ মানেন না। অনেক সময় পরিবারের অনেক সদস্য একসাথে দোকানে আসেন। তখন তো আমাদের কিছু বলার থাকে না।
অন্যদিকে ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন ভাতাভোগী ও সাধারণ গ্রাহকদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে ব্যাংকগুলোতেও। ভীড় কমাতে এবং মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে শহরের সবগুলো প্রবেশমুখে বাঁশের বেরিকেড এবং সড়কে রেলগেটের প্রতিরোধক দণ্ড নামিয়ে দিয়ে শহরে যান চলাচল সীমিত রাখার প্রানান্তকর চেষ্টা করতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।
এদিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র এ্যাড: শাহ্ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর মিলন গাইবান্ধা শহরের সকল মার্কেট-দোকান মালিকসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দর সাথে মতবিনিময় করেছেন। শনিবার (১৬ মে) বিকেলে এ মতবিনিময়ে করোনা ভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বেচাকেনা করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান মেয়র। এতে ব্যর্থ হলে আগামী সোমবার (১৮ মে) থেকে পৌর এলাকার সকল মার্কেট-দোকান বন্ধ রাখার ঘোষনা আসতে পারে বলে ব্যবসায়ীদের জানান তিনি। সভায় গাইবান্ধা সদর থানা অফিসার ইনচার্জ খান মো. শাহরিয়ারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্যবিধি না মেনে দোকান-মার্কেটগুলোতে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় সচেতন মানুষের মাঝেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। করোনাকে ভ্রক্ষেপ না করে মানুষের ঈদ কেনাকাটা প্রসঙ্গে জেলার বিশিষ্টজনরা বলছেন, ‘ঈদ শপিংয়ের নামে সবাই যদি বাইরে বের হয়, তবে এই মহামারী ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ঈদ শপিংয়ে হয়ে যেতে পারে যত সর্বনাশ’।
উল্লেখ্য, গাইবান্ধায় গত পনের দিনে করোনা ভাইরাসে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হয়নি। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর গাইবান্ধায় সেরে উঠেছেন ২২ জন। করোনা জয় করে সুস্থ হওয়া সবাই গাইবান্ধার বিভিন্ন করোনা আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরপর দুটি টেস্টে তাদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় তাদের আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। গাইবান্ধায় গত দু’সপ্তাহে নতুন কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হননি। জেলায় মোট ২৪ জন আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১ জন হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন এবং তিনি ভালো আছেন। এছাড়া রংপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আক্রান্ত ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।