অভাব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের

0
755
তুরস্ক থেকে আনা চার লাখ পিপিই মানসম্মত নয়: যুক্তরাজ্য

খবর৭১ঃ দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। একই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বয়স্ক ও গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মৃত্যু হলেও বাংলাদেশে সব বয়সীদের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে। মাঝবয়সী, বিশেষ করে ৪১-৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৮ শতাংশ আক্রান্ত হলেও মৃত্যুহার ১৯ শতাংশ।

এর অন্যতম কারণ কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব। দু-একটি হাসপাতাল ছাড়া বেশিরভাগ হাসপাতালে নেই বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থা মেডিকেল অফিসারনির্ভর।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, করোনা রোগীদের অন্যান্য জটিল রোগ (হৃদরোগ, নিউরো, ডায়াবেটিস, রেসপিরেটরি সমস্যা, কিডনি জটিলতা ইতাদি) থাকতে পারে। এসব রোগীর অনেক ধরনের জটিলতা থাকে। তাদের সুচিকিৎসা ও সুস্থতায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জরুরি। এ ছাড়া বেশিরভাগ হাসপাতালে অভিজ্ঞ সিনিয়র ডাক্তার না থাকায় রোগীরা সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে রোগীদের মনে ভীতির সঞ্চরা হচ্ছে এবং মাল্টিপোল কো-মরবিডিটিসম্পন্ন রোগীদের মৃত্যু ত্বরান্বিত হচ্ছে।

তাই যেসব কোভিড হাসপাতালে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, সেখানে প্রয়োজনে কমপক্ষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যেন রোগী দেখে আসেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো এ রোগে মৃত্যুহার আরও বাড়বে। তারা বলেন, সম্প্রতি ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এটা ভালো, কিন্তু এরা একেবারেই নতুন। কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় এসব চিকিৎসক যদি উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা না পান, তাহলে তারা চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবেন।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড সংক্রান্ত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কোভিড রোগীদের অন্যান্য জটিল সমস্যা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের মতামত অত্যন্ত জরুরি। তাই যেসব হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে সেখানে এ ধরনের রোগীর চিকিৎসা করতে পারলে ভালো হয়।

তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যারা থাকবেন, তারা সব ধরনের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পাবেন। তিনি অন্যান্য হাসপাতালেও রোগীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা যেন একবার রোগীদের দেখে আসেন, সেটা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাজধানীতে যেসব হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছেন ১২৮ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬৫ জন, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ২০ জন, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ১৭৩ জন, মহানগর হাসপাতালে ৫৪ জন, কেন্দ্রীয় রেলওয়ে হাসপাতালে ৩৩ জন, বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতালে (উত্তরা) ২২ জন, রিজেন্ট হাসপাতালে (মিরপুর) ১১ জন, সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে (যাত্রাবাড়ী) ১০ জন, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন হাসপাতালে ৪৫ জন, লালকুঠি হাসপাতালে (মিরপুর) ৩৭ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ৩২০ জন এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন ৪২০ জন চিকিৎসক।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। এ ছাড়া শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কয়েকটি বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। বাকি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কোভিড চিকিৎসা মেডিকেল অফিসারনির্ভর।

এসব প্রতিষ্ঠানে দু-একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট থাকলেও আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে তিন ভাগে ভাগ হয়ে চিকিৎসা প্রদানের কারণে বেশিরভাগ রোগী তাদের দেখা পান না। অথচ অনেক সিনিয়র চিকিৎসক কোভিড নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। তাদের ডাকা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীর একটি হাসপাতাল পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, আমি একটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কিন্তু আমাকে এ পর্যন্ত কোনো কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল থেকে ডাকা হয়নি।

এমনকি কেউ কোনো রোগীর সমস্যা নিয়ে আলোচনাও করেনি। অথচ আমি রোগীদের সেবা দিতে প্রস্তুত। একই ধরনের মন্তব্য করেন হৃদরোগ হাসপাতালের একজন সহযোগী অধ্যাপক। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, তিনি করোনা রোগীদের সেবা দিতে এমনকি হাসপাতালের দায়িত্ব নিতেও প্রস্তুত। কিন্তু যাদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে তারা অনেকে ভয়ে রোগীদের কাছে যান না। এমনকি হাসপাতালে গিয়েও আড়ালে-আবডালে থাকেন। অনেক হাসপাতালে মেডিকেল অফিসাররা ভয়ে রোগীর কাছে যান না।

দূর থেকে তাদের পরামর্শ দেন। এ ধরনের সেবা আইশোলেশন বা কোয়ারেন্টিনে থাকা রোগের বেলায় প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু আইসিইউতে বা ক্রিটিক্যাল রোগীর চিকিৎসা করা এ ধরনের চিকিৎসকের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এসব কারণেও মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বিত কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এক হাজার ১৬২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ১৭ হাজার ৮২২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ১৯ জন। এ নিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৬৯ জনে। নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে এসব তথ্য জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, মারা যাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১২ জন পুরুষ ও সাতজন নারী। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ০-১০ বছরের মধ্যে একটি মেয়েশিশু আছে, ৩১-৪০ বছরের মধ্যে একজন, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৬১-৭০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ৭১-৮০ বছরের মধ্যে পাঁচজন।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এমন রোগীদের ৩১ ভাগের বয়স ৫০ বছরের নিচে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ০-১০ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুহার ২ শতাংশ, ২১-৩০ বছর বয়সীদের ৩ শতাংশ, ৩১-৪০ বছর বয়সীদের ৭ শতাংশ, ৪১-৫০ বছর বয়সীদের ১৯ শতাংশ, ৫১-৬০ বছর বয়সীদের ২৭ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ৪২ শতাংশ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, আমার মেডিসিন সোসাইটির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য মেডিসিন গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছি। সব চিকিৎসকের উচিত সেই গাইডলাইন ফলো করা। পাশাপাশি যেসব রোগীর মাল্টিপোল কো-মরবিডিটি রয়েছে তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ জরুরি। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে টেলিফোনে হলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here