খবর৭১ঃ করোনার কারণে বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় দেশের শিল্প খাতে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল মওকুফসহ বিশেষ প্রণোদনার সুপারিশ করেছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
এর মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও টেলিফোন বিল মওকুফ, ভ্যাট ট্যাক্স পরিশোধে বিলম্ব হলে জরিমানা না করা, ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলেও অ্যাকাউন্ট সচল রাখা এবং বিদেশি ঋণ অনুমোদন দেয়ার নীতিমালা সহজ করা। সম্প্রতি বিডা থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ সুপারিশ পাঠানো হয়।
জানতে চাইলে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, করোনার কারণে দেশের শিল্প খাত অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে আর্থিক ক্ষতিতে। আর এ খাত টিকিয়ে রাখা দরকার। এক্ষেত্রে সরকার সাপোর্ট দিতে হবে। তিনি বলেন, শিল্প খাতে সমস্যা হলে শুধু মালিকই সংকটে পড়ে না। এতে পুরো দেশ সমস্যায় পড়ে। কারণ এর সঙ্গে শ্রমিকের কর্মসংস্থান, স্থানীয় বাজারে পণ্যের সরবরাহ এবং রফতানি জড়িত।
ফলে এ খাতের জন্য বিল মওকুফসহ আমরা অনেক সুপারিশ করছি। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে আশা করছি, শিল্প খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। বিডার চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের শিল্প খাত অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত। বিনিয়োগকারীদের জন্য নজিরবিহীন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বৈশ্বিক যেসব পূর্বাভাস ছিল, ইতোমধ্যে তা কমিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে পুরো অর্থনীতিতে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এটি কাটিয়ে উঠতে সরকারি সাপোর্ট জরুরি। আর এ খাতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে বিদেশি ঋণ অনুমোদনে বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। অনুমোদন প্রক্রিয়ায় সব ফি মওকুফ করতে হবে। বিডার সুপারিশে সব শিল্প খাতেই বিদেশি ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি সহজ করতে বলা হয়েছে। এটি সম্ভব না হলে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে এ সেবা দিতে বলেছে সংস্থাটি। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বিডা থেকে প্রায় ২৫টির মতো সেবা দেয়া হচ্ছে। এসব সেবায় ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি নেয়া হয়। এসব ফি মওকুফ করা হবে।
বিডার সুপারিশে আরও বলা হয়, ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বহুমাত্রিক সহযোগিতা জরুরি। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর যে কপ্লায়েন্স রয়েছে, তা থেকে ব্যবসায়ীদের অব্যাহতি দিতে হবে। এসব বিষয় বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বিডা। এছাড়াও বিনিয়োগ আর্কষণে ইউটিলিটি বিল কমানোর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
এছাড়াও ব্যবসাবান্ধব ভ্যাট ট্যাক্স নীতি এবং আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকে ছাড় দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কে ছাড় দিতে বলা হয়েছে। কেউ বিল পরিশোধে বিলম্ব করলে তাকে কোনো ধরনের জরিমানা ছাড়াই পরবর্তীতে বিল দেয়ার সুযোগের কথা বলেছে বিডা।
জানা গেছে, দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে ২০১৬ সালে বিডা গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন এ প্রতিষ্ঠানটির এর মূল কাজ হল দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণ করা। এক্ষেত্রে এক ছাদের নিচে ব্যবসায়ীদের ২৬টি সেবা দিতে ইতোমধ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন চালু হয়েছে। এরপর করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য এসব সুপারিশ করল প্রতিষ্ঠানটি।