খবর৭১ঃ করোনাভাইরাসের টিকা তৈরিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আট সংস্থা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসাস।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান। মঙ্গলবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনার চিকিৎসায় কিছু ওষুধে ইতিবাচক ফল মিলছে।
এদিকে চোখে দেয়া যায় করোনার এমন টিকা আবিষ্কারের সুসংবাদ দিয়েছে জাপান। দেশটির বিজ্ঞানীরা বলছেন, জুলাইয়ে এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, টিকা তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা উল্লেখযোগ্য এগিয়েছেন।
এ অবস্থায় টিকা সম্পর্কিত তথ্য চীনের হ্যাকাররা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে টিকা আবিষ্কার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ভারতে করোনার ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে গ্লেনমার্ক। এজন্য ভারতের ১০টিরও বেশি শীর্ষস্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এ গবেষণার জন্য তালিকাভুক্ত হচ্ছে। আনাদোলু এজেন্সি, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, নিউইয়র্ক টাইমস ও হিন্দুস্তান টাইমস।
সংবাদ সম্মলেনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান জানান, করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির কাজ খুব দ্রুত করা হচ্ছে। আর এ ভ্যাকসিন তৈরির জন্য সদস্য দেশগুলোকে আরও বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে।
জানা গেছে, টিকা তৈরির জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ দেশের সহায়তায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ফান্ড করা হয়েছে। তেদ্রোস বলেন, আমাদের কাছে অনেক প্রার্থী রয়েছে। সাত থেকে আটটি সংস্থা (নাম বলেননি) আছে এখন। কিন্তু প্রথমে আমাদের কাছে শতাধিক প্রার্থী এসেছিল। আমরা তাদের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছি, যারা এ টিকা তৈরি করতে সক্ষম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মঙ্গলবার জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে কিছু চিকিৎসায় ইতিবাচক ফল দেখা যাচ্ছে। ওই চিকিৎসাগুলোয় করোনার জটিলতা কমছে, অপেক্ষাকৃত দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন রোগীরা। রয়টার্স জানাচ্ছে, এরকম চিকিৎসাপদ্ধতির মধ্যে পাঁচ-ছয়টি নিয়ে আরও তথ্য সংগ্রহে জোর দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে ঠিক কোন কোন চিকিৎসাপদ্ধতিতে এমন ইতিবাচক সাড়া মিলেছে তা উল্লেখ করেনি তারা।
খবরে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের টিকা ও ওষুধ তৈরিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১৮ মার্চ থেকে বিশ্বজুড়ে আয়োজন করেছে সম্ভাব্য ওষুধ বা টিকার ‘সলিডারিটি ট্রায়াল’। এই উদ্যোগে অংশ নিয়ে শতাধিক দেশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র মারগারেট হ্যারিস মঙ্গলবার জানান, কিছু চিকিৎসায় রোগটির জটিলতা সীমিত হচ্ছে ও রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। কিন্তু এখনও এমন কিছু আবিষ্কার হয়নি যেটি ভাইরাসটিকে মেরে ফেলতে পারে বা থামিয়ে দিতে পারে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো অ্যাবে সোমবার বলেন, আমরা আশা করছি, জুলাইয়ে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় টিকাটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করব। দেশটির সংসদে বাজেট কমিটিকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনিভার্সিটি টোকিও, ওসাকা ইউনির্ভাসিটি ও জাতীয় রোগ সংক্রামক ইনস্টিটিউটসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান টিকাটি তৈরিতে কাজ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, চলতি মাসের শেষের দিকে করোনার চিকিৎসার জন্য সরকার এন্টি-ফ্লু ড্রাগ অ্যাভিগান অনুমোদন দেবে। ইউএস ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের দাবি, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে যে গবেষণা চলছে, সেসব তথ্য চুরি করতে চীনের হ্যাকাররা চেষ্টা করছে। এসব হ্যাকারের সঙ্গে চীন সরকারের যোগাযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই সতর্কবার্তা জারি করতে পারে বলেও জানান সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘চীনের ব্যাপারে আমি মোটেও সুখী নই। খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি আমরা দেখছি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন গবেষণায় আমরা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছি। কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়া গুজবের ওপর ভিত্তি করে চীনকে এভাবে টার্গেট করা অনৈতিক।’ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, কোভিড-১৯ এর কোনো টিকা কখন আবিষ্কার হবে- এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। ডাউনিং স্ট্রিটে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি শুনে আসছি যে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে আশাবাদী কিছু হচ্ছে। কিন্তু এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।