খবর৭১ঃ ভারত পাকিস্তান ইন্দোনেশিয়াকে ছাড়িয়ে মাত্র দুই মাসেই ‘এশিয়ার হটস্পটে’ পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। জনতত্ত্ব-ঘনবসতি ও আক্রান্তের হার হিসাবে সংক্রমণের এ সূচক ভয়ঙ্করভাবেই স্পষ্ট। করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতিতে সপ্তাহখানেক আগেও এশিয়ার হটস্পট ছিল পাকিস্তান। গত কয়েকদিনে পাকিস্তাকে টপকে এক লাফে শীর্ষে উঠে যায় ভারত। আর এখন প্রতিবেশী সবাইকে পেছনে ফেলে সামনে বাংলাদেশ। এশিয়ার টাইম বোম। দক্ষিণ এশিয়ার আতঙ্ক। ‘কাঁচা বয়সে’ ফ্রান্স-স্পেন-ইতালিও এমনই ছিল ইউরোপের আতঙ্ক । একই হাল ছিল যুক্তরাষ্ট্রেরও।
দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চে। তারপর থেকে প্রতিদিনই আক্রান্তের নতুন রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। ধীরে ধীরে এশিয়ার পরবর্তী হটস্পটে পরিণত হচ্ছে। করোনা শনাক্তের দুই মাস পর সেই চিত্র আরও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সোমবার দেশে প্রথমবারের মতো করোনা সংক্রমণের সংখ্যা হাজার (১,০৩৪ জন) ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন ১১ জন। এশিয়ার অন্যান্য দেশ ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুরের চেয়ে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার বেশি।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪তম। গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেন ও রোমানিয়াকে পেছনে ফেলেছে সংক্রমণে এখন এশিয়ায় দশম অবস্থানে বাংলাদেশ। আক্রান্তের হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তানের পেছনে থাকলেও সংক্রমণ হারে এশিয়ার অর্ধশতাধিক দেশের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ভারতে সোমবার পর্যন্ত করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮৮ জনের। তাদের মধ্যে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৬৭ হাজার ২৫৯ জন। সংক্রমণের (করোনা পজিটিভ) হার ৪ দশমিক শূন্য এক শতাংশ। পাকিস্তানে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৪ জনের মধ্যে করোনা পজিটিভ ৩০ হাজার ৯৪১ জনের। সংক্রমণের হার ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বাংলাদেশে সোমবার পর্যন্ত এক লাখ ২৯ হাজার ৮৬৫ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৬৯১ জন। সংক্রমণের হার ১২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
সিঙ্গাপুরে এক লাখ ৭৫ হাজার ৬০৪ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৩ হাজার ৮২২ জনের। সংক্রমণের হার ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ায় এক লাখ ৬১ হাজার ৩৫১ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ২৬৫ জনের। সংক্রমণের হার ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ফিলিপাইনে এক লাখ ৭৩ হাজার ১৪৪ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১১ হাজার ৮৬ জনের। সংক্রমণের হার ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এশিয়ায় করোনা সংক্রমণের শীর্ষে ছিল চীন। দেশটিতে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়া, সৌদি আরবে ৩৯ হাজার ৪৮, কাতারে ২২ হাজার ৫২০, আরব আমিরাতে ১৮ হাজার ১৯৮, ইসরাইলে ১৬ হাজার ৪৯২ ও জাপানে ১৫ হাজার ৭৭৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সবগুলো দেশেই বাংলাদেশের তুলনায় করোনা পরীক্ষার হার তিনগুণের বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও মিয়ানমারে গত কয়েক সপ্তাহে কোনো মৃত্যু নেই। এসব দেশে আক্রান্তের সংখ্যাও হাতে গোনা, এক হাজারের কম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের তুলনায় সংক্রমণ বাড়লেও করোনা পরীক্ষার হার এখনও অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। এজন্য পরীক্ষা বাড়ালে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্লেষকরা। দেশে লকডাউন পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করেছে। গণপরিবহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহনের দেখা মিলছে সড়কগুলোতে। সচল হয়েছে আরিচা ফেরিঘাট। কাঁচাবাজার তো আগেই খোলা ছিল, এর সঙ্গে চালু হয়েছে অন্যান্য দোকানপাটও। মার্কেটগুলোর সামনে বাড়ছে ভিড়। রাজধানীর সড়কে শুরু হয়েছে যানজট। ফলে ক্রমশই কঠিন হয়ে যাচ্ছে দেশের পরিস্থিতি।
দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয় ৮ মার্চ। প্রথম মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ এর উপরে ওঠেনি। প্রথম চার সপ্তাহে আক্রান্ত সংখ্যা ছিল ২১৮ জন। মৃত্যু ২০ জন। দ্বিতীয় মাসের শুরু থেকেই আক্রান্ত বাড়তে শুরু করে একশ, দুইশ, তিনশ-এই হারে। সংক্রমণের দ্বিতীয় মাসের তৃতীয় সপ্তাহের প্রথম দিনই আক্রান্ত পাঁচশ ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই সংক্রমণ সংখ্যা পাঁচশ ছাড়িয়েছে। গত শনিবার দ্বিতীয় মাস শেষে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ১৩৪ জন। মারা গেছেন ২০৬ জন। তৃতীয় মাসের শুরুতেই সোমবার ১,০৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে লকডাউন কাজ করছে না। পুলিশের তৎপরতা কমে গেছে, আক্রান্ত এলাকা থেকে ভালো এলাকায় লোকজন চলে যাওয়া অব্যাহত থাকায় দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। ক্রমেই ঝুঁকি বাড়ছে চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আর গণমাধ্যমকর্মীদের। দেশে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের হার খুবই উদ্বেগজনক। ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিসের (এফডিএসআর) তথ্যমতে, সারা দেশে করোনা সংক্রমিত চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। সোমবার পর্যন্ত পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৫৬ জনে। মারা গেছেন ৭ জন পুলিশ সদস্য। গণমাধ্যমকর্মী আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ জন এবং মারা গেছেন তিনজন সাংবাদিক।