মিজানুর রহমান মিলন,সৈয়দপুর প্রতিনিধি:
সৈয়দপুরে দূর্ঘটনা কবলিত একটি মাইক্রোবাসসহ এর চালককে তিন দিন ধরে আটকিয়ে রেখে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগেকামারপুকুর ইউপি চেয়ারম্যানসহ নয় জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। মাইক্রোবাস চালক মো. রেজাউল হক বাদী হয়ে আজ শনিবার বিকেলে সৈয়দপুর থানায় ওই মামলা করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, নুরে আলম সিদ্দিক ওরফে ভরসা (৩৫), কামারপুকুর ইউপি সদস্য মো. আনছারুল (৪৩) ইউপি সদস্য মো. রাজিউল ইসলাম রাজু (৩৮), মো. মনসুর আলী (৫৫), ফিরোজুল ওরফে ফিরোজ (৩৪), মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫), গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর আলম (২৯) এবং গ্রাম পুলিশ মো. জহির রায়হান (২৭)। এ মামলায় সৈয়দপুর থানা পুলিশ এজাহারভূক্ত দুই গ্রাম পুলিশকে গ্রেফতার করলেও অন্যান্যরা পলাতক রয়েছেন।
মামলার আরজিতে বলা হয়, গাজীপুর জেলার কাপাাসিয়া থানার দূর্গাপুর ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের মো. সুবেদ আলীর ছেলে মো. রেজাউল হক (৩০)। তাঁর নিজের একটি মাইক্রোবাস রয়েছে। ঘটনার দিন গত ৬ মে তিনি গাজীপুর থেকে মাইক্রোবাসটি(নম্বর: ঢাকামেট্টো-চ-১৯-৩৫০৭) নিয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পরদিন ৭ মে সকাল ৭টার দিকে মাইক্রোবাসটি নিয়ে সে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কামারপুকুর বাজারে পৌঁছেন। এ সময় ওই ইউনিয়নের চিকলী আলোকদি পাড়ার আব্দুল সাত্তারের ছেলে মো. ফজলু (৪০) কামারপুকুর বাজার থেকে বাইসাইকেল নিয়ে আকস্মিক সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়কের উঠেন। এতে ওই মাইক্রোবাসের ধাক্কায় বাইসাইকেল আরোহী ফজলু আহত হন। এ সময় চালক রেজাউল মাইক্রোবাসটি থামিয়ে আহত ফজলুকে উদ্ধার করার সময় স্থানীয় লোকজন তাঁর মাইক্রোবাসটি ভাংচুর করেন। পরবর্তীতে মাইক্রোবাস চালক রেজাউল হক আহত ফজলুর শ্বশুর মোবারক হোসেন মোবা’র সহযোগিতা ফজলুকে একটি অটোরিক্সায় সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান আহত ফজলুর অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখনে ফজলুকে ভর্তি শেষে ওইদিন বিকেলে মনসুর ও রাজ্জাকুল নামের দুই ব্যক্তি মাইক্রোবাস চালক রেজাউল হককে রংপুর থেকে জোরপূর্বক কামারপুকুরে নিয়ে আসেন। তবে সেদিন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম লোকমান না থাকায় জনৈক ফিরোজের বাড়িয়ে নিয়ে আটকে রাখা হয় মাইক্রোবাস চালক রেজাউলকে। গতকাল শুক্রবার ফিরোজের বাড়িতে থাকা পুনরায় মাইক্রোবাস চালককে কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমানের সামনে চালক রেজাউল হকের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। কিন্তু মাইক্রোবাস চালক তাদের দাবিকৃত টাকা অস্বীকৃতি জানান। এ সময় ভরসা ও সাইফুল এক লাখ টাকা না দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে জানান। পরে ওই চালককে একটি ঘরে আটকিয়ে রাখা হয় এ অবস্থায় মাইক্রেবাস চালক বিষয়টি তাঁর পরিবারকে অবগত করেন।
এদিকে,খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ আজ শনিবার বেলা আনুমানিক ২টায় কামারপুকুর ইউনিয়নের কামারপুকুর রিফুউজি পাড়ার মো. আজিজুল হকের ছেলে ফিরোজুল হক ওরফে ফিরোজের বাড়ি থেকে মাইক্রোবাস চালক রেজাউল হককে উদ্ধার করেন। আর কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মাইক্রোবাস চালক রেজাউল হক বাদি হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিমকে প্রধান আসামী করে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে সৈয়দপুর থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় দুই গ্রাম পুলিশকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাদি মাইক্রোবাস চালক রেজাউল জানান,দূর্ঘটনার পর ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন তাঁকে আটক করে দূর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁর কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। এমনকি তাঁর বড় ভাইয়ের সাথেও কথা বলে ওই পরিমান টাকা দাবি করেন। কিন্তু টাকা না দেয়ায় তাঁরা তাঁকে আটকে রাখেন। ফলে খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকেসহ তাঁর মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে আজ রাতে মামলার মূল আসামী ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমানের মন্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেস্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায়,কোন মন্তব্য জানা যায়নি। তবে স্থানীয়দের একাধিক সুত্র দূর্ঘটনার জন্য মাইক্রোবাস ও চালক আটকের ঘটনায় ক্ষোভ জানান। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সৈয়দপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আতাউর রহমান। তিনি বলেন, মামলার এজাহারভূক্ত আসামী দুই গ্রাম পুলিশ মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মো. জহির রায়হানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেস্টা চলছে।