ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ঠুনকো অভিযোগে হয়রানী করা হচ্ছে সাংবাদিকদের। তদন্ত করে প্রমাণ না পাওয়ার আগেই গ্রেফতার করা হচ্ছে সাংবাদিক, লেখক, কার্টুনিস্টদের। নাগরিকদের স্বাধীনতায় কেড়ে নেওয়া এই আইন বাতিলের দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সারাদেশে হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় সাংবাদিক, লেখক ও কার্টুনিস্টদের নি:শর্ত মুক্তি ও আইন বাতিল চেয়ে শনিবার দুপুর ঠাকুরগাঁও শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশ করে ঠাকুরগাঁও সচেতন নাগরিক সমাজ। এতে সংহতি প্রকাশ করে স্থানীয় শিক্ষক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, ছাত্রসমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ঠাকুরগাঁও জেলা তেল-গ্যাস জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব মাহবুব আলম রুবেল, জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক রেজওয়ানুল হক রিজু, মাছরাঙা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি ও ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক বদরুল ইসলাম বিপ্লব, শিক্ষক আনিসুর রহমান মিঠু, জেলা ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দীক এতে বক্তব্য রাখেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, বর্তমান দেশে করোনা পরিস্থিতির দুর্যোগ সময়ে চিকিৎসার অব্যবস্থাপনা চলছে। চিকিৎসক ও পুলিশ সদস্যরা ব্যাপক মাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছে। মানুষ খাবার পাচ্ছে না, ত্রাণ লুট হয়ে যাচ্ছে সেটার দিকে সরকারের তেমন নজর নাই। অথচ এই সময়ে ত্রাণ নিয়ে কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে, করোনা প্রতিরোধে কোথায় বাঁধা আছে যারা এই নিয়ে সমালোচনা করছে , কথা বলছে, প্রতিবাদ করছে, প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছে তাদেরকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে তাদের নামে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দেওয়া হচ্ছে ।
ফেসবুকে রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনামূলক লেখালেখি করায়, কার্টুন আঁকায় রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক দিদারুল ভূঁইয়া, লেখক মোস্তাক, কার্টুনিস্ট কিশোর সহ ১১ জনের বিরদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। আর শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৪৫টি মামলা হয়েছে৷ যার অধিকাংশই পেশাগত সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে।
সাংবাদিক বদরুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, চাল চুরির সংবাদ ও স্থানীয় প্রশাসনের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করে মামলার শিকার হয়েছেন দৈনিক অধিকারের সাংবাদিক আল মামুন জীবন। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ যখন ঘরবন্দী। তিনি তখন মামলা খেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দ্রুত তার মামলা প্রত্যহারের দাবি জানান তারা।
বক্তারা এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে দিদারুল ভূইয়া, শফিকুল ইসলাম কাজল, মুশতাক আহমেদ, আহমেদ কবির কিশোর, মোমেন প্রধানসহ দেশের বিভিন্ন সাংবাদিকের নামে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। মোতাহার হোসেন, মাইকেল চাকমাসহ এ যাবত গুম হওয়া সকল ব্যক্তির সন্ধান চাই। অনলাইনে ও মিডিয়ায় মত প্রকাশের দায়ে গ্রেপ্তারকৃত সকলের মুক্তি চাই। গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অবসান চাই, সকল নাগরিকের নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা চাই। নিবর্তনমূলক জনবিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর বাতিল চাই।
সুশীলসমাজ মনে করে, এসব ত্রাণ চুরি ও অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা মানে এই নয় রাষ্ট্র বা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া বা রাষ্ট্রের পরিপন্থি কাজ করা। বরং এসব সংবাদ বা প্রতিবাদ দূর্নীতি বাজদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে এবং সরকারকে তথ্য দিতে সহযোগিতা করে রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য।