মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জে জেলা প্রশাসকসহ করোনায় আক্রান্ত ৮৯ জনের মধ্যে ৮৭ জনেরই বড় ধরনের কোনও উপসর্গ নেই। উপসর্গবিহীন আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই মধ্যেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। কার মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ হচ্ছে সেটা বোঝাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে এক জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে সদর হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি হবিগঞ্জের প্রথম করোনা রোগী ছিলেন।জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অন্য জেলা থেকে আসা এবং সরকারি কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছিলেন। পেশায় মাইক্রোবাসচালক এই ব্যক্তির কোনও উপসর্গ ছিল না। এরপর দীর্ঘদিন জেলায় আর কেউ আক্রান্ত হননি। কিন্তু ২০ এপ্রিল উপসর্গবিহীন লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন ডাক্তার ও নার্সসহ মোট ১০ জন করোনা আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন।
পরদিন ২১ এপ্রিল লাখাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরও একজন নার্স আক্রান্ত হন।প্রতিদিনই বাড়তে থাকে করোনা আক্রান্তের হার। এর সঙ্গে একে একে ডাক্তার, নার্স, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নাম যুক্ত হতে থাকে। চুনারুঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ও ব্রাদার এবং মাধবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্রাদার আক্রান্ত হন। তবে কারোরই কোনও ধরনের উপসর্গ ছিল না। সন্দেহের বসে পরীক্ষা করিয়ে করোনা পজিটিভ হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে ৩৯ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।গত ২৫ এপ্রিল জেলায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ২০ জন। তাও আবার ১৫ জনই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। ১১ জন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর আধুনিক হাসপাতালের স্টাফ। তাদের মধ্যে রয়েছেন ডাক্তার, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান ও অ্যাম্বুলেন্স চালক। আর বাকি চার জন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ আরও দুই জন নির্বাহী ম্যাজিস্টেট। অপরজন একজন নাজির।২৬ এপ্রিল রাতে বানিয়াচং উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) আক্রান্ত হন, তবে তারও কোনও উপসর্গ ছিল না। ৩০ এপ্রিল নতুন করে আরও ২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হয় ৫৪ জন।এরপর গত ১ মে দুই দফায় ১৮ জন করোনায় আক্রান্ত হন, এর মধ্যে ছয় জন সরকারি কর্মকর্তা ও ডাক্তার নার্স ছিল।
২ মে আরও ২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়। দুইজনই নারায়ণগঞ্জ ফেরত শ্রমিক ছিল। তবে তাদের কোনও উপসর্গ ছিল না।গত ৪ মে সোমবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের করোনা শনাক্ত হয় এবং রাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেটের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্ত হয় ৭৬ জন।সর্বশেষ মঙ্গলবার দুপুরে ৫ পুলিশ ও ২ স্বাস্থ্য কর্মীসহ ১২ জনের করোনা পজিটিভ আসে। এর মধ্যে চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হকসহ ৫ পুলিশ, এক স্বাস্থ্যকর্মীসহ ৮ জন শনাক্ত, নবীগঞ্জে ২ জন এর মধ্যে একজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং লাখাই ও বাহুবলে ১ জন করে আক্রান্ত হন। এ নিয়ে ৮৮ জন করোনায় আক্রান্ত হন। বুধবার (৬ মে) আরেকজন বেড়ে করোনা পজিটিভের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৯ জনে। এর মধ্যে কারও উল্লেখযোগ্য ধরনের উপসর্গ ছিল না। উপসর্গবিহীন আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই মাঝেই আতঙ্ক বিরাজ করছে।
চুনারঘাট থানার ওসি তদন্ত চম্পক ধাম জানান, করোনায় আক্রান্ত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শেখ নাজমুল হকের কোনও ধরনের করোনার উপসর্গ ছিল না। তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত ওসি বাসায় আইসোলেশনে আছেন। হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মুখলেছুর রহমান উজ্জ্বল জানান, জেলায় মোট ৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৩৯ জন সরকারী কর্মকর্তা, ডাক্তার নার্স ও সেবক সেবিকা রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৮৭ জনের কোনও উপসর্গ ছিল না। তবে এক শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, সে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিল। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে করোনার ৮০ ভাগ লোকের কোনও ধরনের উপসর্গ থাকে না। করোনায় আক্রান্তদের উপসর্গ থাকতে পারে, আবার নাও থাকতে পারে।’ হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মর্জিনা আক্তার জানান, ‘করোনায় পজিটিভ আসা জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান স্যারের কোনও উপসর্গ নেই। স্যার সুস্থ আছেন ভালো আছেন। তিনি বাসায় থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।’