খবর৭১ঃ করোনা সংক্রমণ রুখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরীক্ষা বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদিন ৫০ লাখ এবং ভারত এক লাখ মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনার টার্গেট নিয়েছে। করোনা মহামারীর শুরুর দিকে দক্ষিণ এশিয়ায় সংক্রমণ কম থাকলেও এখন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বাড়ছে। ওয়ার্ল্ডওমিটারসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা পরীক্ষার হারে শীর্ষে রয়েছে ভুটান। আর সবার শেষে আফগানিস্তান।
বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় ওয়ার্ল্ডওমিটারসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যায় ভুটানে করোনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ২৩০ জনের। এশিয়ার সবচেয়ে সুখী এ দেশটিতে করোনাভাইরাসে এখনও কেউ প্রাণ হারাননি। দেশটিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মাত্র ৭ জন। এর মধ্যে ৫ জনই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকি দু’জন চিকিৎসাধীন। বলা হচ্ছে, শুরু থেকেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি, দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, গণস্বাস্থ্য কর্মসূচি ও পরীক্ষার হার বৃদ্ধির কারণে সাফল্য পেয়েছে দেশটি।
ভারতে প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যায় পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৮০২ জনের, পাকিস্তানে ৯৬২ জনের, বাংলাদেশে ৫৩২ জনের, আফগানিস্তানে ২৮৪ জনের, নেপালে ২ হাজার ১৬৬ জনের, শ্রীলংকায় ১ হাজার ২৫৪ জনের, মালদ্বীপে ১৩ হাজার ৪০৫ জনের।
করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে কোভিড-১৯ আক্রান্তের তালিকায় নাম আসে শ্রীলংকার। তবে করোনা রোগী শনাক্ত ও আইসোলেশনের পাশাপাশি তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়ায় করোনা নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই সফল দেশটি। শ্রীলংকায় মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭১৯ জন, এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২৪ জানুয়ারি। তিন মাসে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫। করোনায় মৃত্যু হয়নি একজনেরও। নেপাল শুরু থেকেই আক্রান্ত ও এর সংশ্লিষ্টদের প্রত্যেককে কড়া নজরদারির মধ্যে কোয়ারেন্টিনে রেখেছে। মালদ্বীপে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫২৭ জন। মৃত্যু হয়েছে মাত্র একজনের। ভারতে সোমবার শুরু হয়েছে তৃতীয় দফার লকডাউন। তবে লকডাউনের সঙ্গে সঙ্গে যে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোও জরুরি, বারবারই সে কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা আক্রান্তদের দ্রুত চিহ্নিত করতে দৈনিক এক লাখ পরীক্ষা করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে পারলে এ মাসের শেষেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির সংশ্লিষ্টরা। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২ হাজার ৮০৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৬৮ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ হাজার ৮৩৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৯৫ জনের।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও বেড়েছে আক্রান্ত ও প্রাণহানির সংখ্যা। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ১৪৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৮২ জনের। পাকিস্তানে আক্রান্ত ২০ হাজার ১৮৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪৬২ জনের।
বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত সাড়ে সোয়া ১২টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ লাখ ১৯ হাজার ৫২৩ জন। মারা গেছেন ২ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৮ জন। সুস্থ হয়েছেন ১১ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৫ জন। করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ইউরোপ ও আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১ হাজার ১৫৪ জন। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ১২ লাখ ৭৯৪, মৃত্যু হয়েছে ৬৯ হাজার ১১৬ জনের। যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনায় মৃত্যুতে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই ইউরোপের। ইতালিতে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ১১ হাজার ৯৩৮ জন। দেশটিতে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৭৯ জন। স্পেনে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ৪৮ হাজার ৩০১, মৃত্যু হয়েছে ২৫ হাজার ৪২৮ জনের। ফ্রান্সে আক্রান্ত ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯৩, মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ৮৯৫ জনের। যুক্তরাজ্যে মোট আক্রান্ত ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৮৪ জন, মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৭৩৪ জনের।
এদিকে শিগগির যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে ৫০ লাখ মানুষ করোনা টেস্ট করাতে পারবেন বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, শিগগির আমরা এটি শুরু করব। যুক্তরাষ্ট্রের কোভিড ট্র্যাকিং প্রজেক্টের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, গত দু’মাসে দেশটিতে প্রায় ৫৭ লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই বিপুল পরিমাণ টেস্ট করানোর জন্যই যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এত বেশি।
ইতালিতে কাজে ফিরছে লাখো মানুষ : ইতালিতে সংক্রমণ কমে আসায় সোমবার সকাল থেকে লকডাউনের বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে সরকার। এতে প্রায় ৪০ লাখ লোক কাজে ফিরছেন। প্রধানমন্ত্রী জোসেপে কন্টি বলেছেন, লকডাউন পুরোপুরি তুলে নেয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে সংক্রমণের গতি-প্রকৃতির ওপর। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন এই বিধিনিষেধ শিথিল করাকে যেন ‘করোনাভাইরাস থেকে পুরোপুরি মুক্ত’ সেভাবে না দেখা হয়।
নিউজিল্যান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্য : নিউজিল্যান্ডে রোববার নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি। ১৬ মার্চের পর থেকে দেশটিতে এদিনই প্রথম শূন্যের ঘরে নেমেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এ ছাড়া দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আর কারও মৃত্যু হয়নি। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ১৩৭ জন। মারা গেছেন ২০ জন।
থাইল্যান্ডে রেস্তোরাঁ ও বার চালু : থাইল্যান্ডে রেস্তোরাঁ খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। অ্যালকোহল বিক্রিও শুরু হয়েছে। তবে বার খুললেও মদ কিনে নিয়ে বাড়িতে বসে খেতে হবে। তবে কিছু খাবারের দোকানে বসেও খেতে পারছেন ভোক্তারা। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৯৮৭ জন। মারা গেছে ৫৪ জন।
আফগানিস্তানে দ্রুত ছড়ানোর আশঙ্কা : আফগানিস্তানের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, কাবুলে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ৫০০ জনের নমুনা নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫০ জনের বেশির ফল পজিটিভ এসেছে। এতে কোভিড-১৯ ভাবনার চেয়েও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে উদ্বিগ্ন দেশটির সরকার। সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাবুল ও বেশির ভাগ শহরে লকডাউন চলছে।
জাপানে ৩১ মে পর্যন্ত জরুরি অবস্থা : করোনাভাইরাসের কারণে মে’র শেষ পর্যন্ত দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা বাড়িয়েছে জাপান। ৭ এপ্রিল প্রাথমিকভাবে টোকিও ও অন্য ছয়টি অঞ্চলে মাসব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। পরে তা পুরো দেশে জারি করা হয়। বুধবার জরুরি অবস্থার মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে আবে তা ৩১ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছেন।
মালয়েশিয়ায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু : শর্তসাপেক্ষে মালয়েশিয়ায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালুর অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে সিনিয়র নাগরিকদের করোনা আক্রান্তের ঝুঁকির কারণে তাদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য মহাপরিচালক ডাক্তার নূর হিশাম আবদুল্লাহ।